বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ফরেনসিক অডিটে ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। অথচ ২০২৩ সালের নিয়মিত অডিট প্রতিবেদনে খেলাপি ঋণ দেখানো হয়েছিল মাত্র ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে এটি অস্বাভাবিক এবং বিস্ময়কর একটি ঘটনা। অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট অডিট টিম দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়ন ব্যাংকের প্রকৃত চিত্র আড়াল করেছে। তাদের প্রতিবেদনে ২০২০ সালে খেলাপি ঋণ দেখানো হয়েছিল ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ২০২১ সালে ৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ২০২২ সালে ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। এতে ব্যাংকটির অবস্থান স্থিতিশীল হিসেবে প্রমাণ দেখানো হলেও বাস্তবে অনেক আগেই ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ ধস শুরু হয়েছিল। ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানান, এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন এ ব্যাংকের দুরবস্থা ঢাকতে প্রভাবশালী মহলকে ব্যবহার করা হয় এবং বিপুল অর্থ লেনদেন হয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-৭-এর অতিরিক্ত পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামানের নেতৃত্বে একাধিকবার অডিট পরিচালিত হয়। ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে তিনি প্রকৃত চিত্র আড়াল করে ইতিবাচক রিপোর্ট দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি মোকাম্মেল হোসেন প্রায় ২০০ কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময়ও ওই ব্যাংকে অডিট চলছিল। এ ছাড়া এস আলম নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য ব্যাংকেও একইভাবে প্রভাব খাটান তিনি। নিয়োগ, বদলি থেকে শুরু করে সিএসআর তহবিল পর্যন্ত তাঁর প্রভাব বিস্তার ছিল বলেও অভিযোগ আছে। এমনকি অনুকূলে না থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতো বলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন।
সম্প্রতি মো. আক্তারুজ্জামানকে সরকারি ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগে বদলি করা হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, একটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ মাত্র এক বছরে ৩ দশমিক ৬২ থেকে ৯৭ দশমিক ৮০ শতাংশে পৌঁছানো পরিকল্পিত আর্থিক জালিয়াতির দৃষ্টান্ত। এ ঘটনায় শুধু ইউনিয়ন ব্যাংক নয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিটব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।