যুক্তরাষ্ট্র সফরে ব্যস্ত সময় পার করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার সফরের প্রথম দিনই তিনি অন্তত অর্ধডজন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ও সেমিনারে অংশ নেন। এক বৈঠকে নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ। দেশ এজন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে।’ এ ছাড়া বিভিন্ন বৈঠকে আন্তর্জাতিক সহায়তা বাড়ানোর পাশাপাশি রোহিঙ্গাসংকট সমাধানে বিশ্বকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে সোমবার স্থানীয় সময় বেলা ৩টায় (বাংলাদেশ সময় সোমবার রাত ১টা) নিউইয়র্ক পৌঁছান অধ্যাপক ইউনূস। জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরী এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক মো. আরিফুল ইসলাম। এ দিন নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক বিশেষ দূত এবং ভারতের জন্য মনোনীত রাষ্ট্রদূত সার্জিও গোর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেন। এ ছাড়া জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে বেলজিয়ামের রানি ম্যাথিল্ড, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন ও আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। রাতে নিউইয়র্কের একটি হোটেলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন ম্যানহাটনে বন্দুকধারীর হামলায় নিহত বাংলাদেশি বংশো™ূ¢ত মার্কিন পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা। এ ছাড়া জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সামাজিক ব্যবসা, যুব ও প্রযুক্তিবিষয়ক জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের পার্শ্ব অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ইউনূস। সার্জিও গোর সাক্ষাৎকালে ড. ইউনূস বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ। দেশ এজন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। প্রধান উপদেষ্টা কক্সবাজারে বসবাসরত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহযোগিতা কামনা করেন। এ সময় সার্জিও গোর প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বের প্রশংসা এবং যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতি সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের জন্য জীবন রক্ষাকারী সহায়তা বজায় রাখার আশ্বাস দেন। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সামাজিক ব্যবসা, যুব ও প্রযুক্তিবিষয়ক জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের পার্শ্ব অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গাসংকট সমাধানে বিশ্বকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব আজ এক সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। বৈষম্য গভীর হচ্ছে। আমাদের এমন একটি অর্থনীতির দিকে এগোতে হবে যা মানুষের কল্যাণ, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং পরিবেশ সংরক্ষণকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেবে।’ তিনি বলেন, ‘এ তীব্র চ্যালেঞ্জের মধ্যেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর মধ্যে ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ।’ তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের বাজেট বা আন্তর্জাতিক সহায়তা কমানো দেশের জন্য প্রতিকূল প্রভাব ফেলবে। উল্টো রোহিঙ্গাসংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সহায়তা বাড়ানো এবং ন্যায়সংগত উত্তরণের পথ নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। স্থানীয় সময় সোমবার রাতে নিউইয়র্কের একটি হোটেলে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বন্দুকধারীর হামলায় নিহত বাংলাদেশি বংশো™ূ¢ত মার্কিন পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা। প্রধান উপদেষ্টা দিদারুলের মৃত্যুতে তাঁর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং দিদারুল ইসলামের প্র্রতি সম্মাননাস্বরূপ পরিবারের সদস্যদের হাতে একটি ক্রেস্ট তুলে দেন।
গতকাল নিউইয়র্ক সফরের দ্বিতীয় দিনে ব্যস্ত সময় পার করেছেন অধ্যাপক ইউনূস। জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টা দিন শুরু করেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস আয়োজিত সংবর্ধনায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে।
এরপর নিউইয়র্ক সময় সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের উদ্বোধনী সেশনে যোগ দেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ। অধিবেশন শুরুর আগে প্রধান উপদেষ্টা উরুগুয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিও লুবেটকিন এবং চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট মিশেল বাচেলেটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের তথ্যানুযায়ী, মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার কর্মসূচির মধ্যে আরও ছিল বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মহাপরিচালক, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাকসিমার সঙ্গে বৈঠক, ‘ফ্যাশন ফর ডেভেলপমেন্ট (এফ৪ডি) : ১৩তম বার্ষিক অফিশিয়াল ফার্স্ট লেডিস লাঞ্চন’-এ যোগদান, ‘সামাজিক উদ্ভাবনের মাধ্যমে অর্থায়ন : সরকারি ও বেসরকারি খাতের নেতাদের বৈঠক’ শীর্ষক আলোচনায় অংশগ্রহণ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প আয়োজিত সংবর্ধনায় অংশগ্রহণসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান।