গ্রামীণ নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নানান সামাজিক বাধা, সচেতনতার অভাব ও সীমিত সুযোগসুবিধার কারণে প্রায়ই ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন। বিশেষ করে অনেক নারী নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন না হওয়ায় কিংবা সামাজিক সংকোচে গ্রাম আদালতে যেতে দ্বিধা বোধ করেন। এমন পরিস্থিতিতে গ্রাম আদালতকে আরও কার্যকর ও জনবান্ধব করতে ইউএনডিপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় গ্রাম আদালত শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের (তৃতীয় পর্যায়) মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম শুরু করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
সম্প্রতি রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে গ্রামীণ নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য জেন্ডার-সংবেদনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গ্রাম আদালতের সেবা প্রচারের গুরুত্ব বিষয়ে আলোচনা হয়।
সভায় জানানো হয়, গত বছর পর্যন্ত গ্রাম আদালতে ১ লাখ ২৬ হাজার মামলা দায়ের হয়েছে, যার মধ্যে ৩৩ হাজারের বেশি নারী আবেদনকারী। মামলার প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ হওয়ায় উচ্চ আদালতে আপিলের সংখ্যা কমে এসেছে, যা জনগণের আস্থা বৃদ্ধির প্রতিফলন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ বলেন, ‘নারীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হলে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।’ স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকসুদ জাহেদী বলেন, ‘গ্রাম আদালতের সেবা প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে সাংবাদিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।’ প্রকল্প সমন্বয়ক বিভাষ চক্রবর্তী জানান, গ্রাম আদালতে দায়ের করা মামলার ৭৮ শতাংশ নিষ্পত্তি হয়েছে। গড়ে ১৮ দিনে সমাধান মিলেছে মাত্র ৩২৮ টাকায়। এ উদ্যোগ ইতোমধ্যে ১০ লক্ষাধিক মানুষের কাছে পৌঁছেছে। নারী প্রতিনিধি রত্না আক্তার বলেন, ‘দুই পক্ষকে বসিয়ে আমরা ন্যায়বিচার প্রচার করি, তবে কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হওয়া দরকার।’
ইউএনডিপির প্রতিনিধি মো. আনোয়ারুল হক জানান, প্রায় ১০ হাজার মামলা জেলা আদালত থেকে গ্রাম আদালতে পাঠানো হয়েছে, যা জনগণ ও প্রশাসনের আস্থা বৃদ্ধির প্রমাণ। গ্রাম আদালতের কার্যক্রম আরও জেন্ডার-সংবেদনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হলে ন্যায়বিচার সহজলভ্য হবে এবং সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে বক্তারা একমত প্রকাশ করেন।