চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর ৬০ শতাংশই নারী। তারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন স্তন ক্যানসারে এবং ৪০-৪৫ শতাংশ পুরুষ আক্রান্ত হচ্ছেন ফুসফুসের ক্যানসারে। আক্রান্তের মধ্যে শিশুও রয়েছে ৩-৪ শতাংশ। ইনস্টিটিউটের গত দুই বছরের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর চালু হওয়া এ ইনস্টিটিউটে গত আগস্ট পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছে ৩০ হাজার ৬০৯ জন। এর মধ্যে বহির্বিভাগে সেবা নেন ১৯ হাজার ৫৪ জন, আন্তঃবিভাগে ৩ হাজার ১০৭ জন, কেমোথেরাপি ও অন্যান্য বিভাগে ৭ হাজার ৫৯৯ জন এবং রেডিওথেরাপি সেবা নিয়েছেন ৮৪৯ জন। প্রতিদিন গড়ে ভর্তি থাকেন ৪০-৫০ জন এবং বহির্বিভাগে মাসে গড়ে দেড় হাজার মানুষ চিকিৎসা নেন। চিকিৎসা নিতে আসা ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই তরুণ ও মধ্য বয়সি। নারীদের ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৫০ বছর এবং পুরুষদের মধ্যে ৪০ ঊর্ধ্বরাই বেশির ভাগ ক্যান্সারে আক্রান্ত। ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. শেফাতুজ্জাহান বলেন, ইনস্টিটিউটে আসা রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত নারী, ১৮ শতাংশ। এর মৃত্যুর হার ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। পুরুষদের মধ্যে বেশি হয় ফুসফুস ক্যান্সার, ৩০ শতাংশ। এতে আক্রান্তদের বেঁচে থাকার হার সবচেয়ে কম। এরপর হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সার, ১৫ শতাংশ, স্টমাক ক্যান্সার ১০ শতাংশ, জরায়ু ক্যান্সার ৮ শতাংশ এবং কোলন ক্যান্সার ৭ শতাংশ। এ ছাড়া কিছু বিরল ক্যান্সারও আছে।
ইনস্টিটিউটের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. নুজহাত শারমিন রুহী বলেন, বর্তমানে ক্যান্সার বাড়ছে। কারণ শিল্প ও পরিবেশ দূষণ, শিপব্রেকিং, কারখানা ও রাসায়নিক বর্জ্য থেকে বায়ু-পানি দূষণ, অভ্যাসগত ঝুঁকি যেমন- পান, সুপারি, তামাক, ধূমপান ও লবণাক্ত খাবার বেশি খাওয়া। পেশাগত ঝুঁকি যেমন- অ্যাসবেস্টস, রাসায়নিক ও ধাতুর সংস্পর্শ। এ ছাড়া সচেতনতার অভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা না পড়া ও জিনগত কারণ- বংশগত ঝুঁকি। চিকিৎসকরা জানান, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ, শিল্প ও শিপব্রেকিং এলাকায় পরিবেশ সুরক্ষা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন, জনসচেতনতায় তামাক, সুপারি ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস পরিহার, নিয়মিত স্ক্রিনিং-সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য ক্যান্সার পরীক্ষা চালু করা, পেশাগত সুরক্ষা, সুস্থ জীবনধারা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা বজায় রাখা জরুরি।