মশার কামড়ে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। মশক নিধনে মাঠপর্যায়ের দায়িত্বে থাকা সিটি করপোরেশনের কর্মীরা কাজ করেন আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে। এই কর্মীরা মাসে ১৭ হাজার টাকা বেতন পেলেও ঠিকাদারের পেটেই চলে যায় অর্ধেক। কম বেতনের কারণে অনেকেই দায়সারা কাজ করেন, নেই কোনো জবাবদিহিতা। দীর্ঘদিন এ সমস্যা চলতে থাকায় সিটি করপোরেশনের বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছেন আউটসোর্সিংয়ের কর্মীরা।
এ সমস্যা সমাধানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) আউটসোর্সিং থেকে বের হয়ে সরাসরি নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডিএনসিসি’র বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিচ্ছন্নতা, মশক নিধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে আউটসোর্সিংয়ের কর্মীরা। এসব কর্মী নিয়োগ হয় ঠিকাদারের মাধ্যমে। সিটি করপোরেশন থেকে ১৭ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকার মতো বেতন পেলেও এর অর্ধেকই চলে যায় ঠিকাদারের পকেটে। কর্মী নিয়োগ নিয়ে হয় বাণিজ্য। প্রতিষ্ঠানের প্রতি দায়বদ্ধতা না থাকায় কর্মীদেরও কাজে গাফিলতি থাকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এসব জানার পরে এ অন্যায় আর চলতে দেওয়া যায় না। এজন্য ডিএনসিসিতে আউটসোর্সিং না করে সরাসরি কর্মী নিয়োগ করে সার্বিক কাজ সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৪ হাজার জনবল নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।’
আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবাগ্রহণ নীতিমালা ২০১৮ অনুযায়ী সেবা ক্রয়ের জন্য নির্ধারিত সেবাগুলোর যে তালিকা করা হয়েছে তাতে রয়েছে ১২ ধরনের খাত। বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আউটসোর্সিং বলে পরিচিত এ ধরনের শ্রমিক-কর্মচারী নিয়োগ করা হচ্ছে- সিকিউরিটি গার্ড বা নিরাপত্তা প্রহরী, ক্লিনার বা পরিচ্ছন্নতাকর্মী, সহকারী গার্ডেনার, ইলেকট্রিক্যাল হেলপার, কার্পেন্টার বা কাঠমিস্ত্রি, হেলপার, স্যানিটারি হেলপার, পাম্প হেলপার, গাড়ির হেলপার, এসি মেকানিক হেলপার, চৌকিদার, ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট, ইমারজেন্সি অ্যাটেনডেন্ট, স্ট্রেচার বেয়ারার, ওয়ার্ড বয়, আয়া, সহকারী বাবুর্চি, লিফটম্যান, লাইনম্যান, ফরাশ লস্কর, মাসন হেলপার, ম্যাসেঞ্জার, মশালচি, অ্যানিমেল অ্যাটেনডেন্ট, গেস্ট হাউস অ্যাটেনডেন্ট, হোস্টেল অ্যাটেনডেন্ট, ডোম, বাইন্ডার, অদক্ষ শ্রমিক (ড্রাইভার হেভি), সুপারভাইজার, কেয়ারটেকার, ওয়ার্ড মাস্টার, ইলেকট্রিশিয়ান, লিফট মেকানিক, এসি মেকানিক, পাম্প মেকানিক, জেনারেটর মেকানিক, অন্যান্য কারিগরি কাজ-সংক্রান্ত টেকনিশিয়ান এবং সহকারী ইঞ্জিন মেকানিক, টেন্ডল, গ্রিজার, টেইলর, ডুবুরি, লন্ড্রি অপারেটর, ফরাশ জমাদার, সহকারী ইলেকট্রিশিয়ান, শুকানি, বাবুর্চি কুক, গার্ডেনার বা বাগানকর্মী দক্ষ শ্রমিক হিসেবে।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের নিয়মমাফিক কাজের কর্মী বাহিনীর বড় অংশই আউটসোর্সিংয়ের কর্মী। ঠিকাদারের মাধ্যমে সিটি করপোরেশনে কাজের আওতায় আসে এই কর্মীরা। ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ডিএনসিসির রুটিন কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম মশক নিধন। লার্ভিসাইডিং এবং ফগিংয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রায় ২০ জন করে কর্মী দায়িত্ব পালন করেন। কিছু ওয়ার্ডের সীমানা বড় হওয়ায় সেখানে আরও বেশি কর্মী কাজ করেন। সব মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ১০০ জনের মতো আউটসোর্সিংয়ের কর্মী কাজ করেন এই বিভাগে। এ ছাড়া বর্জ্য বিভাগেও পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে আউটসোর্সিংয়ের কর্মীরা কাজ করেন।
ডিএনসিসির উপ-প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. মফিজুর রহমান ভুঁইয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডিএনসিসির বর্জ্য বিভাগে প্রায় ৪০০ জনের মতো আউটসোর্সিংয়ের কর্মী আছেন। একজন আউটসোর্সিং কর্মীর প্রতিদিনের আয় হিসাব করলে মাসে ১৭ হাজার টাকা বেতন দাঁড়ায়। কিন্তু ভ্যাট, ট্যাক্স কেটে ঠিকাদারের হাত ঘুরে এ কর্মীরা প্রতি মাসে ৮ হাজার টাকারও কম বেতন পান। এত কম বেতন পাওয়ার ফলে তাদের কাজে আগ্রহ কমে যায়। তাদের কাছ থেকে যে সেবা জনগণের পাওয়ার কথা সেটা পাওয়া যায় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই কর্মীরা সরাসরি প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়োগ পেলে মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে ঠিকাদারকে আর কোনো টাকা দিতে হবে না। ফলে পুরো বেতনটাই তারা পাবে। এতে তাদের জীবনমান উন্নত হবে এবং কাজের প্রতি আগ্রহও বাড়বে। নিজের প্রতিষ্ঠানের কর্মী হওয়ায় ডিএনসিসিও তাদের কাছ থেকে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারবে।’