ঐতিহ্যের জৌলুস হারিয়ে দেশের পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে পরিচিতি পাওয়া রাজশাহী এখন ধীরে ধীরে ঘিঞ্জি শহরে পরিণত হচ্ছে। বাতাসে বেড়েছে ক্ষতিকর ধূলিকণা। পরিবেশ দূষণের মাত্রা ছড়াচ্ছে। দেশব্যাপী রাজশাহীর যে সুনাম ছিল তা আজ অনেকটাই ম্লান। এক সময়ের নির্মল বায়ুর শহর রাজশাহী গত ১৬ মার্চ দেশের সবচেয়ে দূষিত শহর হিসেবে স্থান করে নেয়। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের তথ্যমতে, ওই দিন সকাল ৯টায় রাজশাহীর বায়ুমান ছিল ১৬২। একই সময়ে রাজধানী ঢাকার বায়ুমান ছিল ১৩৪। আইকিউএয়ারের হিসাবে বিশ্বের ১২৪টি শহরের মধ্যে সেদিন রাজশাহীর বায়ুমান সবচেয়ে খারাপ ছিল।
মূলত শহরের কোথাও এখন আর কোনো শৃঙ্খলা নেই বলে মনে করেন নগরবাসী। অপরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে নির্মল বায়ুর শহরকে দূষিত বায়ুর শহরে পরিণত করা হয়েছে। বিগত বছরজুড়ে সবচেয়ে বেশি প্রাচীন গাছ কাটা, একের পর এক পুকুর-জলাশয় ভরাট করা হয়েছে, কোনো নিয়মনীতি না মেনেই শহরে অটোরিকশা বাড়তে দেওয়া, বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠানের তার ঝুলে আছে, এমনকি বাস মালিক সমিতির দাপটে শহরের ভিতর থেকে বাস টার্মিনাল সরিয়ে নেওয়া যায়নি। ফলে এ সময়ের ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, শহরে কোনো কাজই ঠিকমতো হচ্ছে না। শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে না। যানবাহনে শৃঙ্খলা নেই, ফুটপাতগুলো দখল হয়ে একটি ঘিঞ্জি শহরে পরিণত হচ্ছে। মশার উপদ্রব বেড়েছে। বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজিনাস নলেজ-বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রাজশাহী শহরকে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠতে দেওয়া হয়নি। গত ১০ বছরে উন্নয়নের নামে রাজশাহী শহরের সবচেয়ে প্রাচীন গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। একের পর এক পুকুর-জলাশয় ভরাট করা হয়েছে। রাজশাহীতে প্রান্তিক মানুষদের জন্য বাসস্থান গড়ে তোলা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’ পরিবেশ আন্দোলন পরিষদের আহ্বায়ক মাহবুব টুংকু বলেন, ‘রাজশাহীতে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা দেখা দেয় এবং গ্রীষ্মকালে পানির লেভেল নিচে নেমে যায়। রাজশাহী ওয়াসার অনেক পাম্প মেশিনে পানি ওঠে না। আমাদের সরকারের উন্নয়ন নীতিমালায় এসব পরিকল্পনা দেখি না। বরং রাজশাহীতে অপরিকল্পিত অবকোঠামোগত উন্নয়ন হতেই দেখেছি।’ পরিবেশ কর্মী শামীউল ইসলাম বলেন, এখন ফাঁকা জায়গা থাকছে না। যে যেভাবে পারছেন, বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। গত এক দশকে এমন পাঁচ শতাধিক ভবন গড়ে উঠেছে। পরিকল্পিত নগরায়ন না হওয়ায়, সেগুলো শহরটাকে ঘিঞ্জি শহরে পরিণত করছে।
রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথোরাইজড অফিসার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একটা সুন্দর ও পরিকল্পিত নগরী গড়ে তুলতে কাজ করছি। মানুষের দীর্ঘদিনের অভ্যাসের কারণে কিছু কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। তবে সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন কাজগুলো শেষ হলে তখন শহরটাকে আর ঘিঞ্জি লাগবে না।’