আধুনিক যাত্রী ছাউনি রাজধানী ঢাকায় খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। যে কটি যাত্রী ছাউনি শহরজুড়ে নানা জায়গায় রয়েছে তার মধ্যে বেশির ভাগই রয়েছে অরক্ষিত অব্যবহৃত অবস্থায়। ফলে এসব ছাউনি টেম্পো স্ট্যান্ড থেকে শুরু করে হকার এবং জুয়াড়িদের দখলে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
ঢাকায় পুলিশের মতামতের ভিত্তিতে নির্মাণ করা যাত্রী ছাউনির উদ্দেশ্য ছিল বাস স্টপেজ এবং যাত্রী ওঠানামার কাজে ব্যবহার করা। কিন্তু যাত্রী ছাউনিগুলো দখল হয়ে থাকা, ব্যবহারের অনুপযোগী করে রাখা, যাত্রী ছাউনির স্থান নির্বাচন সঠিক না হওয়া, বাস না দাঁড়ানো, যাত্রীরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকার প্রভাব পড়ছে রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থায়। যেখানে-সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানোয় শহরজুড়ে লেগে থাকে যানজট।
সড়কেই গাড়ির জন্য অপেক্ষা করেন যাত্রীরা। গাড়ি এলে ছোটাছুটি করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়িতে ওঠেন। রাজধানীতে চলাচলরত পরিবহনগুলো কখনোই নির্ধারিত জায়গায় থামে না। সড়কের মধ্যেই চলতি অবস্থায় যাত্রী ওঠানামা করায়। মোহাম্মদপুর বসিলা রোডের অবস্থা আরও করুণ। এখানে বিদ্যমান একটি মাত্র যাত্রী ছাউনি গত দুই বছর ধরে ব্যবহার হচ্ছে টেম্পো স্ট্যান্ড হিসেবে। এখানে দাঁড়িয়ে থাকে সারি সারি টেম্পো। আর এর সামনে রয়েছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ফেলে রাখা বিশাল বিশাল চাকতি। এতে ঢেকে গেছে যাত্রী ছাউনি।
স্থানীয় চা বিক্রেতা মুস্তাফিজ জানান, ডিপিডিসির কাজ শেষ হয়েছে দুই বছর আগে। এরপর থেকে এই চাকতিগুলো এভাবেই পড়ে আছে এখানে। যেন দেখার নেই কেউ। মোহাম্মদপুরের বসিলা রোডের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রাস্তার পাশে এভাবে বিশাল বিশাল চাকতি পড়ে থাকতে দেখা যায়। ফলে তৈরি হচ্ছে যানজট। এ পথে চলাচলকারী মানুষকে পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। গুলশান নতুন রাস্তা, গুলিস্তান, মৌচাক, হাতিরঝিলসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে প্রায় একই চিত্র। যাত্রী ছাউনিগুলোতে যাত্রীদের অপেক্ষা করা কিংবা অবস্থান করার পরিবেশও নেই। কারণ অধিকাংশই ব্যবহারযোগ্য নয়। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। অনেক পড়ে রয়েছে অযত্ন-অবহেলায়। কোনোটিতে বসেছে দোকান, কোনোটি আবার হকারদের দখলে। এমনকি যাত্রীদের বসার বেঞ্চ পর্যন্ত তুলে ফেলা হয়েছে অনেকটির। দোকানপাট, ভাঙাচোরা, নোংরা, মাদকসেবী ও ভবঘুরেদের দখলে থাকায় যাত্রীদের ব্যবহারের সুযোগ নেই।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যাত্রী ছাউনির ভিতর এবং বাইরের পরিবেশ খুবই খারাপ। যাত্রী ছাউনিগুলোর সামনে কনস্ট্রাকশনের কাজ হওয়ার পর আর কোনো খবর থাকে না। যাত্রীরাও যাত্রী ছাউনি ব্যবহার করতে না পেরে ধরেই নিয়েছে এটি তাদের জন্য নয়। গণপরিবহনগুলো যাত্রী ছাউনির সামনে না থেমে যেখানে-সেখানে থামছে। একবার যাত্রী ছাউনি বানিয়ে দেওয়ার পর যেন কর্তৃপক্ষের আর কোনো ভূমিকা নেই এসব রক্ষণাবেক্ষণে। তিনি আরও বলেন, যাত্রী ছাউনির মূল কাজ যাত্রীদের রোদ-বৃষ্টিতে সুরক্ষা দেওয়া। কিন্তু আসল কাজ বাদ দিয়ে বাকি সবই হয়। এ রকম ছোট ছোট অব্যবস্থাপনা রাজধানীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
রাজধানীর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক স্নেহা রোজারিও বলেন, প্রখর রোদ কিংবা হঠাৎ বৃষ্টি থেকে বাঁচতে রাজধানীর পথচারীদের জন্য যাত্রী ছাউনি খুব জরুরি। যাত্রী ছাউনিগুলো নির্মাণ করাও হয়েছিল বাস স্টপেজ এবং পথচারীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে। বেদখল হয়ে যাওয়ার কারণে বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে না। যাত্রী ছাউনিগুলোকে সংস্কার করে ব্যবহারের উপযোগী করতে হবে। সেখানে যাত্রীদের বসার, খাওয়ার, পানির সুব্যবস্থা করতে হবে। সঙ্গে গণশৌচাগার থাকলে ভালো হয়। কোনো ধরনের দোকান, হকার, ভবঘুরে বা মাদকসেবীদের দখলে যেন না থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। নিয়মিত দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।