গ্রিসে অবস্থানরত প্রায় ১০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি সম্প্রতি বৈধতা লাভ করলেও, তাদের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত রয়ে গেছে। বৈধতার মেয়াদ মাত্র পাঁচ বছর হওয়ায় অনেকেই আনন্দের পাশাপাশি দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। প্রবাসীরা দূতাবাসের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সফরে যান গ্রিক অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী নোতিস মিতারাচি। ওই সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি বছর গ্রিসে ৪ হাজার মৌসুমি বাংলাদেশি শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং সেই সঙ্গে দেশটিতে অবস্থানরত প্রায় ১৫ হাজার অনিয়মিত বাংলাদেশিকে ৫ বছরের জন্য বৈধতার আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। দেশ থেকে কর্মী নিয়োগের কোনো অগ্রগতি না থাকলেও চুক্তির ধারাবাহিকতায় এরই মধ্যে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি অস্থায়ীভাবে বৈধতা পেয়েছেন। তারা এখন বৈধভাবে কাজ করছেন এবং দেশে টাকা পাঠাতে পারছেন। তবে এই বৈধতা শুধু পাঁচ বছরের জন্য হওয়ায়, অনেকে ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। মোহাম্মদ আমীন ১০ বছর ধরে গ্রিসে বসবাস করছেন। আগে কাজে যেতে প্রায়ই পুলিশি হয়রানির শিকার হতেন। লুকিয়ে লুকিয়ে কাজে যেতেন। প্রথমে অদক্ষ কর্মী ছিলেন, ডিশ ওয়াশের কাজ করতেন। ধীরে ধীরে কাজ শিখে এখন তিনি একটি পিজ্জার দোকানের শেফ হিসেবে কর্মরত। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বৈধতা পেয়েছি। এখন আমাদেরকে যদি পাঁচ বছর পর দেশে ফেরত পাঠায় আমাদের পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাবে। এমনকি গ্রিক সরকারও দক্ষ কর্মী হারাবে। কারণ আমরা যারা এখন গ্রিসে আছি, দীর্ঘ কয়েক বছরে সবাই দক্ষ কর্মী সবাই বিভিন্ন ধরনের কাজ জানি। পাঁচ বছর পর আমাদেরকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে নতুন লোক আনার চিন্তা করলে তাদেরই ভুল হবে। নতুন লোক আমাদের জায়গায় আসতে হলে কাজ শিখতে শিখতেই কয়েক বছর চলে যাবে। তাই আমাদের দাবি, আমাদের এই রেসিডেন্ট কার্ড যেন স্থায়ী করা হয়। দূতাবাসের মাধ্যমে গ্রিক সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’ বৈধতা পাওয়া মাসুম নামের এক গার্মেন্টকর্মী বলেন, ‘আমরা অনেক কষ্ট করে এই জায়গায় এসেছি। এখন বৈধ হয়ে কাজ করছি কিন্তু পাঁচ বছর পর কী হবে জানি না। ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা থাকলে পরিবার নিয়ে স্বস্তিতে থাকতে পারতাম।’ সুহেল আহমদ বলেন, ‘রেসিডেন্স কার্ড নবায়নের সুযোগ না থাকলে আবার অবৈধ হয়ে পড়ার ঝুঁকি আছে। এতে করে স্বাভাবিক জীবনে বড় ধাক্কা আসবে।’
এ বিষয়ে গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাহিদা রহমান সুমনা জানান, তারাও প্রবাসীদের এই দুশ্চিন্তা সম্পর্কে অবগত এবং গ্রিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন। এই অস্থায়ী বৈধতা স্থায়ী করার ব্যাপারে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।