কেমন আছেন? কখনো এই বয়সে নিজেকে একা অনুভব করেন না?
আছি, আলহামদুলিল্লাহ! আর আমি কখনো একা ফিল করি না। এখনো করছি না। আমি হতাশায় বিশ্বাস করি না। কারণ আমার জীবনে যখন একবার চাকচিক্য থাকে, সকাল হলে রাত হয় রাত হলে সকাল হয় আমি এটিকে বিশ্বাস করি। সূর্য যখন থাকবে না চাঁদ উঠবে চাঁদ যখন থাকবে না সূর্য উঠবে। আমার জীবনেও তা হতে পারে। আমি মেনে নেই। তাই আমার মধ্যে হতাশা বলে কোনো জিনিস নেই। আমি সব সময় প্রফুল্ল থাকার চেষ্টা করি। আমি সব কিছুর পরে রাতের বেলায় ওপরওয়ালাকে ধন্যবাদ জানাই। জীবনে আমার পাওয়ার ভাগটাই বেশি, না পাওয়ার ভাগ অনেক কম।
মেইনস্ট্রিম চলচ্চিত্রে দীর্ঘদিন ধরে নেই কেন?
মেইনস্ট্রিম চলচ্চিত্রে আমি আর কাজ করতে যাব না হয়তো। কিন্তু ওটিটি ফিল্ম যেগুলো হচ্ছে, বা ওয়েব কনটেন্ট, সেগুলোতে আমি যদি আমার মনের মতো চরিত্র পাই তা করব। যদি ডিরেক্টর আমাকে চয়েজ করে নিশ্চয়ই করব।
ক্যারিয়ারে বহু ব্যবসাসফল ছবিতে অভিনয় দিয়ে দর্শকদের হাসিয়েছেন, কাঁদিয়েছেন। তবে অন্যান্য চরিত্রের থেকে মা চরিত্রে আপনি অনবদ্য...
তবে আমাকে দর্শকরা মনে রেখেছে ইমনের (সালমান শাহ) মা চরিত্রে অভিনয়ের কারণে। ১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মতো ‘বিক্ষোভ’ সিনেমায় ওর মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। এরপর একাধিক সিনেমায় এই একই চরিত্রে ইমনের (সালমান শাহ) সঙ্গে কাজ করেছি। শুধু ‘বিচার হবে’ সিনেমায় অভিনয় করেছিলাম ওর ভাবির চরিত্রে।
সালমান শাহের সঙ্গে আপনার সখ্যের গল্প একটু বলবেন কি?
পর্দায় যেমন আমি ওর মা ছিলাম বাস্তবেও তাই ছিল। ও আমাকে আম্মু বলে যখন ডাক দিত, মনে হতো আমার ছেলেই আমাকে ডাকছে। মা-ছেলের মতোই আমাদের কথার আদান-প্রদান হতো। আমি যখন বাংলাদেশ টেলিভিশনে নাটক করতাম, তখন সালমানও বিটিভিতে আসত, নাটক করত। ওই সময় থেকেই সালমান আমার ছেলের চরিত্রে অভিনয় করছে। বিশেষ করে সালমানকে বিটিভির প্রযোজক ও নাট্যকার জিয়া আনসারী খুব পছন্দ করতেন। তাঁর রচিত বা প্রযোজিত বেশির ভাগ নাটকে ছোট ছেলের চরিত্র থাকলেই সালমানকে দিয়ে করাতেন। ওই সময় থেকেই সালমান আমার ছেলে হয়ে যায়। মনে আছে, একবার সালমান অভিনয় করছিল আরেক সেটে। ওর মা চরিত্রটি অন্য আরেকজন করছিল। ওই সেট থেকে আমার কাছে আসার পর আমি বললাম, বাহ্! এবারে তোর মা তো দেখতে খুবই গ্ল্যামারাস, সুন্দর। তোর আজকে নিশ্চয়ই খুব ভালো লাগছে কাজ করতে? তখন সালমান আমার কাঁধে হাত দিয়ে কানের কাছে মুখ রেখে বলল, নাহ, মা মা লাগে না।
তাঁর শূন্যতা কতখানি ভাবায় আপনাকে?
আসলে মাঝেমধ্যে আমার খুবই কষ্ট লাগে। আমি ইমোশনাল হতে চাই না; কিন্তু হয়ে যাই। এই ছেলেটা (সালমান শাহ) বেঁচে থাকলে হয়তো আমাকে ফিল্ম ছাড়তে হতো না।
অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামানও আজ নেই...
কখনো কখনো হঠাৎ আমার মনে হয়, এই মানুষটি তো নাই! তখন কষ্ট লাগে। এ টি এম ভাই ভালো থাকতেই চলে গেছেন, এটা আলহামদুলিল্লাহ! তাঁকে বেশি কষ্ট পেতে হয়নি। এখন যখন কোনো চরিত্র আসে তখন মনে হয়, ‘ইস্ ও থাকলে হয়তো আমার সঙ্গে করত।’ আমার হিরো খুঁজে পাওয়া যায় না এখন। এক আবুল হায়াত আর কতটা টানবে।
এখনকার শিল্পীদের অপেশাদারি নিয়ে মন্তব্য কী?
শিল্পীরা এখন হালকা হয়ে গেছে। নতুন যারা এসেছে তারা সাংবাদিক কেন, কাউকেই সম্মান করতে শিখেনি। সাংবাদিকের সঙ্গে নিয়ে ঘুরেবেড়ায়। আমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান বোধ নেই। কিছু সাংবাদিক আছে যারা শিল্পী সম্পর্কে জেনে প্রশ্ন করে না। এমনও অনেক শিল্পী আছেন, যারা তার অনুগত সাংবাদিকদের ফোন করে তাদের কাজের ফিরিস্তি দিয়ে নিউজ করতে অনুরোধ করেন। শিল্পীদেরও সচেতন হতে হবে কথায় ও কাজে। মিডিয়ার সব ব্যাপার গুবলেট হয়ে গেছে। সেই পরিবেশ নেই সাংবাদিক-শিল্পীদের মধ্যে।