রাজশাহীর বাসিন্দাদের সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে পদ্মা নদীর পানি শোধন করে সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে রাজশাহী ওয়াসা। চীনের হুনান কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডের সহায়তায় গোদাগাড়ীতে নির্মাণাধীন শোধনাগার প্রকল্পের কাজের ইতোমধ্যে ২০ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ২০২৭ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হলে প্রতিদিন ২০ কোটি লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা যাবে এ শোধনাগার থেকে। রাজশাহী ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক পারভেজ মামুদ বলেন, ‘প্লান্ট থেকে পানি সাড়ে ২৬ কিলোমিটার প্রধান সঞ্চালন এবং ৪৮ কিলোমিটার প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি পাইপলাইনের মাধ্যমে নগরীর গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছানো হবে। ওয়াসা এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের মধ্যে চুক্তির পর রাজশাহী-গোদাগাড়ী সড়কের পাশে বসানো শুরু হয়েছে সঞ্চালন লাইনের পাইপ। সবমিলিয়ে প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ২০ শতাংশ। চার বছর মেয়াদি প্রকল্প শেষে ২০২৭ সালে দৈনিক ২০ কোটি লিটার বিশুদ্ধ পানি পাবেন নগরবাসী।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় সুপেয় পানির সংকট সমাধানে সরকার কাজ করছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হলে রাজশাহীবাসী নিরাপদ পানির সুবিধা ভোগ করবেন বলে আশা করি।’ তিনি দেশের অন্যান্য এলাকায়ও এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চেয়েছেন।
রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল আলম সরকার জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির স্তর অত্যন্ত নিচে নেমে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা কমাতে এ সারফেস ওয়াটার প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রকল্প পরিচালক ও রাজশাহী ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী পারভেজ মাহমুদ জানান, গোদাগাড়ী শোধনাগারের মাধ্যমে কাটাখালী, নওহাটা ও গোদাগাড়ী পৌরসভার ৩০টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা নিরাপদ পানির সুবিধা পাবেন। এতে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমবে এবং পরিবেশ সুরক্ষিত হবে। প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে ২০২৩ সালের জুনে কাজ শুরু হয়। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৬২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ১ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা এবং বাকি ২ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা অর্থায়ন করছে হুনান কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের তিনটি অংশ গোদাগাড়ীর পদ্মা-মহানন্দা নদীর মোহনায় ইনটেক পয়েন্ট, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এবং পবা উপজেলার হরিপুরের বুস্টার পাম্প স্টেশনের কাজ চলছে সমানতালে। ২০৩৫ সালের মধ্যে রাজশাহীতে পানির চাহিদা অনুযায়ী দৈনিক ২০ কোটি লিটার বিশুদ্ধ পানি উৎপাদন সম্ভব হবে। জনসংখ্যা অনুপাতে পানি সরবরাহের পরিধি ৮৪ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে উন্নীত হবে।