দেশের বাজারে নাজিরশাইল নামের কোনো ধান নেই। তারপরও হরেক নামে ও দামে বিক্রি হচ্ছে নাজিরশাইল চাল। একেক দোকানে একেক নামের ও নানা দামের নাজিরশাইলে প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তারা। সর্বনিম্ন ৬২ টাকা থেকে ৯৭ টাকায় বিভিন্ন বাজার ও সুপার শপে বিক্রি হচ্ছে নাজিরশাইল চাল। অনুসন্ধানে জানা গেছে, উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপে চাল কেটে ও পলিশ করে বিভিন্ন নাম দেওয়া হয়। কখনো অর্ধসেদ্ধ আবার কখনো পূর্ণসেদ্ধ করে বাজারে বিক্রি করা হয়। স্থান-কাল-পাত্রভেদে একই চাল ভিন্ন নামে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী বস্তাবন্দি হচ্ছে আড়তগুলোয়। আর ক্রেতাদের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। টঙ্গী বাজারের চালের আড়তে দেখা যায়, বিভিন্ন নামের নাজিরশাইল চাল বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। মা রাইস স্টোরের প্রোপাইটর মো. কালাম জানান, পালকি নাজিরশাইল ৭৬ টাকা, মান্নান নাজিরশাইল ৮২ টাকা, শাহরিয়ার নাজিরশাইল ৯৪ টাকা, কাটারি নাজিরশাইল ৯৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মিতু রাইস এজেন্সির বিক্রেতা রাজ্জাক জানান, রয়েল ক্রাউন নাজিরশাইল ভালোটা ৮৬ টাকা, পরের মানের ৮২ টাকা, পালকি নাজিরশাইল ৬৮, মজুমদার নাজিরশাইল ৮২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মাহি রাইস এজেন্সি মালিক আবদুর রহিম জানান, সেভেন স্টার নাজিরশাইল ৭৬ টাকা, জারা নাজিরশাইল ৭৬ টাকা, রয়েল ক্রাউন নাজিরশাইল ৮২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ানবাজারের জনতা রাইস এজেন্সির প্রোপাইটর হাজী মো. আবু ওসমান জানান, ৭২ থেকে ৮৮ টাকার বিভিন্ন নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে। পালকি নাজিরশাইল ৮৮ টাকা, ছালা পালকি ৭২ টাকা, উৎসব নাজিরশাইল ৬৮ টাকা, হাসকি নাজিরশাইল ৬২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সুপার শপ মিনা বাজারে দেখা যায়, নাজির সুপার প্রিমিয়াম ৮৫ টাকা, নাজির প্রিমিয়াম ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সুপার শপ স্বপ্নতে দেখা যায়, কাটারি নাজিরশাইল ৯৫ টাকা, নাজিরশাইল সম্পা কাটারি ৮২ টাকা, নাজিরশাইল পাইজাম ৬৩ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আপন ফ্যামিলি মার্টে দেখা যায়, নাজিরশাইল গ্রেড এ ৯২ টাকা, নাজিরশাইল প্রিমিয়াম ৭৫ টাকা, নাজির কাটারি প্রিমিয়াম ৯৬ টাকা, নাজিরশাইল ডায়মন্ড ৯৭ টাকা ও নাজিরশাইল মুন্সী ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, আমন হাইব্রিড ধানিগোল্ড ও হীরা চালের খুচরা পর্যায়ে যোক্তিক বাজার মূল্য ৪৬ টাকা। আমন উফশী বিআর ১১ এর খুচরা পর্যায়ে যোক্তিক বাজার মূল্য ৪৭ টাকা। ব্রি ২৮ আর ব্রি ২৯ খুচরা পর্যায়ে যোক্তিক বাজার মূল্য ৫৫ টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের মনিটরিং ও বাস্তবায়ন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. জামাল উদ্দীন বলেন, ‘নাজিরশাইল নামে কোনো জাতের ধান নেই। তবে বাংলাদেশে একসময় শাইল জাতের ধান উৎপাদন হতো, যা বিলুপ্তির পথে। আমন মৌসুমে এ ধানের আবাদ হতো। সেই শাইল ধান না থাকলেও আমন মৌসুমে উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের ব্রি ধানকে নাজিরশাইল নামে নামকরণ করে বাজারে ছাড়ছেন মিল মালিকরা।’ তিনি বলেন, নাজিরশাইলের মতো মিনিকেট বলেও ধানের কোনো জাত নেই। এই মিনিকেট হলো ব্রি ধান ২৮। চালের উপকারী জিনিস তুলে ফেলে চিকন করে মিনিকেট চাল তৈরি করা হয়। চালের এ রকম বিভিন্ন নাম দামে গ্রাহকরা প্রতারিত হচ্ছেন। মানুষ চালের নামে ব্র্যান্ড খাচ্ছে। মিলার এবং উৎপাদকরা তাদের মতো করে পণ্য তৈরি করছে। দাম নির্ধারণ করছে। ভোক্তারা সেখানে প্রতারিত হচ্ছেন। নীতিমালা থাকলে তারা এ ধরনের সুযোগ পেত না।