সাকিব আল হাসান ও মেহেদি হাসান মিরাজ দুই দেশসেরা স্পিনার। তার পরও টাইগার স্পিন বিভাগের মূল ভরসা তাইজুল ইসলাম। তিন স্পিনারের ঝুলিতেই দুই শর ওপর উইকেট। কিন্তু বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুল দেশের একমাত্র টেস্ট স্পেশালিস্ট স্পিনার। বাঁ হাতের স্পিন ভেলকিতে বহু ম্যাচ উপহার দিয়েছেন দেশকে। সিলেটে সফরকারী জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ, সমালোচকদের তির বিদ্ধ করেছে তাইজুলকে। সিলেট টেস্টে ১০ উইকেট নেন মিরাজ। অথচ ২ উইকেটের বেশি পাননি তাইজুল। সেজন্যই তাইজুলের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন টাইগারদের ম্যাচে ফিরিয়ে সমালোচনার জবাব দিয়েছেন ৫৩ টেস্টে ২২৪ উইকেট নেওয়া তাইজুল। ক্যারিয়ারে ১৬ বারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে মিডিয়ার মুখোমুখিতে তাইজুল বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, এতগুলো টেস্ট (৫৩ টেস্ট) খেলার পর... আলহামদুলিল্লাহ, যতগুলো উইকেটই (২২৪) হয়েছে... একটা ম্যাচ দেখে যারা সমালোচনা করেন, আমার মনে হয় না তারা খেলা বোঝেন।’ সিলেটে হারের পর প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু জানিয়েছিলেন, নিজের সেরা বোলিং করতে পারেননি তাইজুল। শুধু প্রধান নির্র্বাচক নন, সমাজমাধ্যমেও বিভিন্ন ট্রলের শিকার হয়েছেন তাইজুল। সেজন্য ৩৩ বছর বয়স্ক দেশসেরা স্পিনার ব্যথিত হয়েছেন।
সিলেটের স্পোর্টিং উইকেটে বাজে ব্যাটিং করে নাজমুল বাহিনী। যদিও বোলাররা লড়াই করেছেন। চট্টগ্রাম টেস্ট শুরু হয়েছে গতকাল। সিরিজে ফিরতে মরিয়া টাইগাররা। চট্টগ্রাম টেস্ট একাদশে পরিবর্তন এনেছে তিনটি। ছন্দ হারানো মাহামুদুল হাসান জয়ের পরিবর্তে নেওয়া হয়েছে এনামুল হক বিজয়কে। ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে ৪টি সেঞ্চুরি করে ছন্দে থাকা এনামুল বিজয় টেস্টে ফিরেছেন তিন বছর পর। পেসার খালেদ আহমেদের জায়গায় নেওয়া হয় অফ স্পিনার নাঈম হাসানকে। দীর্ঘদেহী অফ স্পিনার সর্বশেষ খেলেছিলেন গত অক্টোবরে মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। অভিষেক হয়েছে তানজিম সাকিবের। ডান হাতি পেসারের অভিষেক হয়েছে ‘স্পিডস্টার’ নাহিদ রানার স্থলে। পিএসএল খেলতে নাহিদ এখন পাকিস্তানে। অভিষেক ম্যাচে উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার রাঙিয়েছেন তানজিম সাকিব। নাঈম ফিরেই উইকেট পেয়েছেন। উইকেটশূন্য ছিলেন সিলেটে ২০০ উইকেট নেওয়ার মাইলফলক গড়া মেহেদি মিরাজ।
চাপের মুখে নিজেকে প্রমাণ করেন বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুল। প্রথম ও দ্বিতীয় সেশন শেষে টাইগাররা যখন পুরোপুরি কোণঠাসা, তখন তৃতীয় সেশনে জ্বলে ওঠেন তিনি। প্রথম সেশনে ২৮ ওভারে ২ উইকেটে ৮৯ রান তোলে জিম্বাবুয়ে। দ্বিতীয় সেশনে নিক ওয়েলচ ও শ্যন উইলিয়ামস ৯০ রানের জুটি গড়েন। দুজনের দৃঢ়তায় দ্বিতীয় সেশনে কোনো উইকেট পায়নি নাজমুল বাহিনী। কিন্তু দিনের তৃতীয় ও শেষ সেশনে প্রতিপক্ষের ৭ উইকেট তুলে নেয়। বিশেষ করে ৩৩ বছর বয়সি তাইজুল স্পিনের ভেলকিতে নাভিশ্বাস তোলেন সফরকারী ব্যাটারদের। তুলে নেন ৫ উইকেট। দিন শেষে তাঁর বোলিং স্পেল ২৭-৬-৬০-৫। প্রধান নির্বাচক সমালোচনা করলেও সর্বশেষ ছয় টেস্টে চতুর্থবার ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। সমালোচনার মুখে উইকেট নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বাঁ হাতি স্পিনার, ‘অবশ্যই তৃপ্তির একটা বিষয়। কারণ সিলেটে আমি যেভাবে বোলিং করেছি, ৫০ (৫৩) টেস্ট খেলে ফেলা কারও জন্য ভালো কিছু নয়। তারপর ঘুরে দাঁড়িয়েছি, এটা ভালো লাগার বিষয়। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, দলকে সাহায্য করতে পেরেছি।’
চট্টগ্রাম ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে (আগের নাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম) এর আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটি মাত্র টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। ২০১৪ সালের ওই টেস্টটি টাইগাররা জিতেছিলেন ১৮৬ রানে। ওই টেস্টে তাইজুল খেললেও উইকেট নিয়েছিলেন ২টি। ম্যাচ জিতিয়েছিলেন লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেন লিখন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
জিম্বাবুয়ে : প্রথম ইনিংস
৯০ ওভারে ২২৭/৯ (বেনেট ২১, কারান ২১, ওয়েলচ ৫৪, উইলিয়ামস ৬৭, আরভাইন ৫, মাধেভেরে ১৫, সিগা ১৮*, মাসাকাজদা ৬, এনগারাভা ০, মাসেকেসা ৮, মুজারাবানি ২*; হাসান ১০-৩-২৪-০, তানজিম ১০-০-৪৯-১, মিরাজ ২১-৭-৪৪-০, তাইজুল ২৭-৬-৬০-৫, নাঈম ২০-৯-৪২-২, মুমিনুল ২-০-২-০)