দোকান বদল হলেই বেড়ে যায় মোটা চালের দাম। খুচরা, পাইকারি ও সুপার শপ- একেক জায়গায় একেক দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রি-২৮ এবং ব্রি-২৭ (পাইজাম) জাতের চাল, যা বাজারেও মোটা চাল বলে পরিচিত। পাইকারি পর্যায় থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত আসতে এসব চালের দামের পার্থক্য গড়ে উঠছে ১০ থেকে ১২ টাকা। তাতে প্রতারিত হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের ভোক্তা। বাজারে মোটা চালের দামের এ ব্যবধানের জন্য পাইকারি বিক্রেতারা খুচরা বিক্রেতাদের আবার খুচরা বিক্রেতারা পাইকারি বিক্রেতাদের দায়ী করছেন। তবে সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন মূলত মিল মালিকরা। তারা যে দাম নির্ধারণ করে দেন, সেই দামেই পাইকাররা প্রতিদিন বাজারে চাল ছাড়েন। অনেক সময় মোবাইলে বা হোয়াটস-অ্যাপে ম্যাসেজ দিয়েও মিল মালিকরা চালের দাম নির্ধারণ করে দেন বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বাজারে তিন থেকে চার ধরনের মোটা চাল পাওয়া যায়, যা মূলত ব্রি-২৮ জাত থেকে আসে। ব্রি-২৭ নামে কাছাকাছি আরেকটি জাতের ধান থাকলেও সেটি পাইজাম নামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা ও গুটি চাল নামেও বাজারে মিলছে মোটা চাল। গতকাল কারওয়ান বাজারের পাইকারি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে প্রতি কেজি ব্রি-২৮ জাতের চাল ৫৭ থেকে ৬০ টাকা, স্বর্ণ-গুটি চালের কেজি ৫৩ থেকে ৫৪ টাকা এবং প্রতি কেজি পাইজাম পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৭ টাকায়। খুচরা বাজারে গিয়ে দেখা গেল, সেই একই জাতের ব্রি-২৮ তিন গ্রেডের চাল ৬০, ৬৫ ও ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া পাইকারি বাজারের চেয়ে ৬ টাকা বেশিতে প্রতি কেজি স্বর্ণা-গুটি চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। প্রতি কেজি পাইজাম বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৬৮ টাকায়। রাজধানীর বিভিন্ন সুপার শপ ঘুরে দেখা যায়, এসব দোকানে চিকন চালের সমাহার থাকলেও মোটা চাল খুব কম পাওয়া যায়। শুধু ব্রি-২৮ জাতের মোটা চাল পাওয়া গেছে কয়েকটি সুপারশপে যেখানে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকায়, যা খোলা বাজার থেকে চার থেকে পাঁচ টাকা বেশি। সরকারি বিপণন কর্তৃপক্ষ ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, এক মাসের ব্যবধানের ব্রি-২৮ ও স্বর্ণা চালের দাম বেড়েছে ২-৩ শতাংশ। এর মধ্যে ব্রি-২৮ এর দাম বেড়েছে ২ শাতাংশ ও স্বর্ণা চালের দাম বেড়েছে ৩ শতাংশ। কারওয়ান বাজার নোয়াখালী রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী শাওন বলেন, পাইকারি দোকানে দামের কিছু তারতম্য হলেও খুচরা দোকানে গিয়ে কেজিপ্রতি ব্যবধান ১০ থেকে ১২ টাকা বেড়ে যায়। মূলত খুচরা দোকানিরাই চালের বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেন বলে তিনি দাবি করেন। খুচরা বিক্রেতারা দাম বৃদ্ধির দোষ নিতে নারাজ। মহাখালী এলাকার মুদি দোকানি মো. করিফ বলেন, চালের দাম বাড়ার পেছনে তাদের কোনো হাত নেই। পাইকারি বাজারে চালের দাম বাড়লে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়ে। মোবাইল ফোনের খুদে বার্তায় চালের দাম নির্ধারণের বিষয়টি অস্বীকার কারে বাংলাদেশ অটো, মেজর ও হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি সহিদুর রহমান পাটোয়ারী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চালের দাম বাড়লে মিল মালিকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েন। তাই কখনই সারা দেশের ২ হাজার অটোমিল ও ১৪ হাজার হাসকিং অটোমিল মালিকরা তাদের ক্ষতি ডেকে আনতে চাইবেন না। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চালের দাম নিয়ে ব্যবসায়ীদের টালবাহানা নতুন কিছু নয়। অসাধু ব্যবসায়ীদের দমনে আমাদের সরকারের দুটি সংস্থা রয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কিছু কাজ করলেও আরেক প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতা কমিশন একেবারেই কর্মহীন। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মিলগুলোতে নজরদারি বাড়ালে চালের বাজারের দামের ব্যবধান আর থাকবে না বলে মনে করেন তিনি।