দেশের ব্যাংকিং খাতের সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরের নেতৃত্বে একটি ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কাউন্সিল বা সংকট ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল গঠন করা হবে। এর প্রধান হবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর। ছয় সদস্যের শক্তিশালী এই কাউন্সিলে অর্থ মন্ত্রণালয় ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দুই সচিব ছাড়াও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুজন ডেপুটি গভর্নর অন্তর্ভুক্ত হবেন।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সূত্রগুলো বলছে, সম্প্রতি ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। ওই অধ্যাদেশে এই কাউন্সিল গঠনের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। জানা গেছে, অধ্যাদেশ জারির পর এই কাউন্সিল গঠন হলে, গঠিত কাউন্সিলের প্রধান কাজ হবে ব্যাংকিং খাতের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা ও গ্রাহকের আস্থা অর্জনে সহায়তা করা। এ ছাড়া ব্যাংকিং খাতের সংকট ব্যবস্থাপনায় কৌশলপত্র তৈরি, সংকট মোকাবিলায় আপদকালীন পরিকল্পনা গ্রহণ ও সুপারিশ করা হবে। পাশাপাশি দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় সরকারের সঙ্গে সমন্বয় ও সহযোগিতার মাধ্যমে বিভিন্ন আইনি উৎকর্ষ সাধনেও কার্যকর সুপারিশ করবে এই কাউন্সিল। সংশ্লিষ্টরা জানান, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের ব্যাংকিং খাতে আস্থা অর্জন সবচেয়ে বড় বিষয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশের ব্যাংকগুলোর সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। অনেক ব্যাংকের রেটিং তলানিতে পৌঁছে গেছে। এমন কি সরকারের মালিকানাধীন কিছু ব্যাংকের এলসিও খুলতে চাইছে না বিদেশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। সূত্রগুলো জানায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংকিং খাতে যে দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে-এর ফলে নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যাংক। জানা গেছে, দুর্বল ব্যাংকের তালিকায় থাকা ১১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছয়টি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও অন্তত পাঁচটি ব্যাংক এখনো চরম সংকটে রয়েছে। ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা দূরের কথা, এসব ব্যাংক গ্রাহকের আমানতও দিতে পারছে না। এসব ব্যাংকের বেশির ভাগ ঋণ গোষ্ঠীগত স্বার্থে দেওয়া হয়েছে, যা এখন আর উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। সংকট সামাল দিতে এই ব্যাংকগুলো প্রতিদিন তারল্য সহায়তার জন্য আবেদন করলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের নতুন অর্থ সহায়তা প্রদান করছে না। ফলে গ্রাহকরা এখনো তাদের আমানত উত্তোলনে সমস্যায় পড়ছেন।
মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশে দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণের জন্য বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকলেও সংকট ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে যে কাউন্সিল গঠন হবে- সেটি ব্যাংকের দক্ষতা ও সামর্থ্য বাড়াতে বিভিন্ন সুপারিশ প্রণয়ন করবে।
তবে এসব সুপারিশ অধ্যাদেশের অধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীন অবস্থান বা কার্যক্রম পরিচালনায় কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না বা প্রভাবিত করবে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অধ্যাদেশ হলেও ব্যাংকিং খাতের সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে এ ধরনের কাউন্সিল গঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এর ফলে ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা রক্ষায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারবে।’