দাঁড়াশ সাপকে বলা হয় পরিবেশ ও কৃষকের বন্ধু। বিশেষ করে কৃষিজমি, ধানখেত, গোলাঘরে ইঁদুরের উপদ্রব কমাতে এ সাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তথ্যানুযায়ী, সাত-আট ফুটের একটি দাঁড়াশ সাপ বছরে শতাধিক ইঁদুর খেতে পারে। আর এভাবে একটা দাঁড়াশ সাপ ইঁদুরের হাত থেকে বছরে রক্ষা করতে পারে অন্তত ১৫ টাকার ফসল। একটা সময় ঘরের কোনে, জমির আইলে, বন-জঙ্গলে অহরহ দেখা মিলত দাঁড়াশ সাপের। মানুষের হাতে মারা পড়ায় নিরীহ ও নির্বিষ এই সাপটি এখন বিলুপ্তির পথে।
তথ্যানুযায়ী, একটি বড় দাঁড়াশ সাপ সারা বছরে গড়ে ৫০-৬০টির মতো ইঁদুর খায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ফসলী খেতের বড় ধেড়ে ইঁদুরগুলোই দাঁড়াশের পছন্দ। এ কারণে সাপটিকেও ফসলের খেতে দেখা যায়। ইঁদুর জন্মের পর মাত্র ৩-৪ মাস বয়সে বাচ্চা দিতে পারে। পূর্ণ বয়স্ক ইঁদুর প্রতি ১৯-২১ দিনে একবার গর্ভধারণ করতে পারে। প্রতি বছর ৭-৮ বার প্রজনন করতে পারে। প্রতি বারে বাচ্চা হয় ৬-১২টি। একটি ইঁদুর বছরে বাচ্চা দেয় ৬৪ থেকে ১০০টি পর্যন্ত। অর্থাৎ, দাঁড়াশের খাওয়া ৫০-৬০টি ইঁদুর বেঁচে থাকলে তাদের সন্তান, নাতি-পুতিসহ ৮-১০ হাজার ইঁদুরে পরিণত হতো। প্রতিটি ইঁদুর বছরে ২০০ টাকার ফসল নষ্ট করলেও পরিমাণ দাঁড়ায় ১৬ লাখ টাকার বেশি।
দাঁড়াশ সাপ মূলত ইঁদুর, ব্যাঙ, ছোট পাখি এবং ডিম খেয়ে জীবনধারণ করে। এটি খাদ্যচক্রের অংশ হিসেবে পাখি ও অন্যান্য প্রাণীর খাদ্যও হয়। ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। দাঁড়াশ সাপ মানুষের ভয়ে পালিয়ে যায়, সহজে আক্রমণ করে না। কিন্তু অজ্ঞতা ও ভয় থেকে মানুষ এ সাপকে মেরে ফেলে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। বর্তমানে বাসস্থান ধ্বংস এবং মানুষের হাতে হত্যার কারণে দাঁড়াশ সাপের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, যা ইঁদুর বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষির ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।