একজন টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগীর শরীরে প্রথমবারের মতো এমন কোষ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, যা নিজ থেকেই রোগীকে ইনসুলিন উৎপাদনে সক্ষম করেছে।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এই কোষগুলো শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আক্রমণ থেকে বাঁচতে জেনেটিকভাবে সম্পাদিত, ফলে রোগীকে কোনো ধরনের ইমিউনো-সাপ্রেসেন্ট ওষুধ খেতে হয়নি।
টাইপ-১ ডায়াবেটিস সাধারণত তখনই দেখা দেয়, যখন দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদক কোষগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে। এতদিন রোগীদের নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও ইনসুলিন ইনজেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসা দিতে হতো। কিন্তু নতুন এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে কার্যকর কোষ প্রতিস্থাপন করে সেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ৪২ বছর বয়সী এক পুরুষ রোগী, যিনি পাঁচ বছর বয়স থেকেই টাইপ-১ ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন, তার হাতের পেশীর মধ্যে একাধিক ইনজেকশনের মাধ্যমে সুস্থ দাতার আইলেট (islet) কোষ প্রতিস্থাপন করা হয়। পরবর্তী ১২ সপ্তাহে দেখা যায়, খাবার খাওয়ার পর রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে গেলে এসব কোষ স্বাভাবিকভাবে ইনসুলিন উৎপাদন করছে।
গবেষকদের সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো, রোগীর শরীরে কোষগুলো টিকে থাকার জন্য কোনো ইমিউনো-সাপ্রেসেন্ট ওষুধ প্রয়োজন হয়নি। সাধারণত দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিদেশি কোষ ধ্বংস করে দেয়, তাই প্রতিস্থাপিত অঙ্গ বা কোষ টিকিয়ে রাখতে রোগীদের শক্তিশালী ওষুধ সেবন করতে হয়। এসব ওষুধ সংক্রমণ ও অন্যান্য জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
এই সমস্যার সমাধান করতে প্রতিস্থাপিত কোষে তিনটি জিন-সম্পাদনা করা হয়েছিল ক্রিস্পার (CRISPR) প্রযুক্তির মাধ্যমে।
দুটি এডিটের মাধ্যমে বিশেষ অ্যান্টিজেন কমানো হয়, যা টি-সেল কোষ শনাক্ত করতে ব্যবহার করে। আরেকটি এডিটে বাড়ানো হয় সিযি৪৭ প্রোটিন, যা শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরোধক কোষকে বিভ্রান্ত করে।
ফলাফলে দেখা গেছে, যেসব কোষে তিনটি এডিটই সফল হয়েছে কেবল তারাই শরীরে টিকে থেকে কার্যকর ইনসুলিন উৎপাদন করেছে।
এর আগে বানর ও ইঁদুরের ওপর এ পরীক্ষায় আশাজনক ফল পাওয়া গিয়েছিল। তবে মানুষের ক্ষেত্রে এটাই প্রথম। গবেষকরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি শুধু ডায়াবেটিস নয় বরং অন্যান্য প্রতিস্থাপন চিকিৎসাতেও ইমিউনো-সাপ্রেসেন্ট ছাড়াই কার্যকর সমাধান এনে দেবে।
এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এ।
সূত্র: সায়েন্স এলার্ট
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল