দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ হাজার ৯১৯ জন।
আজ সোমবার (১৮ আগস্ট) সকাল ৯ টা থেকে জাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমাদানের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে নির্বাচনকে ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
রাজনৈতিক সংগঠন, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র ভিত্তিক বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী দিয়ে প্যানেল গোছানোর কাজ শুরু করেছে। বিভাগ, আবাসিক হল, টিএসসি, ক্যাফেটেরিয়া, বটতলা সব জায়গায় আলোচনার মূল বিষয় জাকসু নির্বাচন।
শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন জাকসু নির্বাচন না হওয়ায় তাদের অধিকার আদায়ের যথাযথ কোন প্ল্যাটফর্ম ছিল না। জাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের সার্বিক অধিকার আদায়ে কাজ করবেন বলে আশা তাদের।
সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সীমান্ত বর্ধন বলেন, জাকসুতে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে অংশ নেবেন। নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হয়ে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য, গবেষণা, পড়াশোনার সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য তিনি কাজ করবেন। গণরুম, গেস্টরুম কালচারের মতো শিক্ষার্থীদের জন্য পীড়াদায়ক বিষয়গুলো কখনো যেন ফিরতে না পারে সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
এদিকে শক্তিশালী প্যানেল গঠনের জন্য জাবি শাখা ইসলামি ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ এককভাবে প্যানেল দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে শাখা ছাত্রদলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিভক্তি দেখা গেছে। ছাত্রদল থেকে দুটি প্যানেল হওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। একটি প্যানেল শাখা ছাত্রদলের সুপার ফাইভের অনুসারীদের মধ্য থেকে অন্য প্যানেল বিদ্রোহী গ্রুপ থেকে হতে পারে বলে ছাত্রদলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে। বিদ্রোহী গ্রুপের নেতাকর্মীরা ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক-সদস্য সচিবসহ সুপার ফাইভের নেতাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে।
এছাড়া, প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুটি প্যানেল দৃশ্যমান। একটি প্যানেলে ছাত্র ইউনিয়ন (অদ্রি-অর্ক), জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট (ফাইজা), ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী), বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীসহ কয়েকটি সমমনা সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং অন্য প্যানেলে ছাত্র ইউনিয়নের জাহিদ-তানজিম একাংশ, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট (মেঘ), জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারসহ কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতুসহ কয়েকজন নিলে পৃথক প্যানেল গঠনে তোড়জোড় দেখা গেছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব অধ্যাপক একেএম রাশিদুল আলম বলেন, জাকসু নির্বাচনকে ঘিরে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। ক্যাম্পাসে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। নিরাপত্তাজনিত বিষয়গুলোতে আমরা সতর্ক রয়েছি। নির্বাচনে প্রার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে, সেই পরিবেশ বজায় রাখতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এজন্য সকল অংশীজনের সহযোগিতা কামনা করছি।
এবারের জাকসু নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি আবাসিক হলে মোট ১১ হাজার ৯১৯ জন ভোটার রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬ হাজার ১০২ জন ছাত্র এবং ৫ হাজার ৮১৭ জন ছাত্রী ভোটার।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল