দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই শোনা যাচ্ছে পরের বিশ্বযুদ্ধ নাকি হবে পানির জন্য। ইতোমধ্যে সেই নমুনা দেখা যাচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশেই শুরু হয়েছে সুপেয় পানির সংকট। এ তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল। আধুনিক ইতিহাসে প্রথম কোনো দেশের রাজধানী পানিশূন্য হওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে পানির স্তর নেমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। কুয়ার মধ্যে বালতি ফেললে উঠছে না পানি। ইতোমধ্যে শুকিয়ে গেছে শহরের প্রায় অর্ধেক কুয়া। সূর্য উঠতেই কাবুলে শুরু হয় পানির জন্য যুদ্ধ।
শহরটিতে এখন অন্যতম দামি পণ্যে পরিণত হয়েছে পানি। চার-পাঁচ লিটার পানি কিনে পুরো দিন চালাচ্ছে অনেক পরিবার। তাও সব সময় মিলছে না। শুধু পানি কিনতেই কাটছাঁট করতে হচ্ছে খাবারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসে। বাংলাদেশেও ঢাকা, গাজীপুর, বরেন্দ্র অঞ্চলে দ্রুত নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানি সংকটে বিপর্যয়ের দোরগোড়ায় কাবুল। এভাবে চলতে থাকলে অল্প সময়ের ব্যবধানে কাবুল প্রাণহীন বিরান মরুভূমিতে পরিণত হতে পারে। আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা মার্সি কর্পসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে- পানির সংকট এভাবে চলতে থাকলে কাবুল হতে পারে বিশ্বের প্রথম আধুনিক রাজধানী, যেখানে সম্পূর্ণভাবে পানি ফুরিয়ে যাবে। সংস্থাটির মতে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে তা শহরটিকে অর্থনৈতিক পতনের দিকে নিয়ে যেতে পারে। মার্সি কর্পসের আফগানিস্তান প্রোগ্রামের পরিচালক মারিয়ান্না ফন জান সতর্ক করে বলেন, এটি শুধু পানির সংকট নয়, এটি একযোগে স্বাস্থ্য সংকট, অর্থনৈতিক সংকট এবং মানবিক জরুরি অবস্থা।
মাত্র তিন দশক আগেও কাবুলের জনসংখ্যা ছিল ২০ লাখের নিচে। তবে ২০০১ সালে তালেবান সরকারের পতনের পর নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার আশায় শহরে বিপুল মানুষ ভিড় জমাতে শুরু করে। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে পানির চাহিদাও। কাবুলের পানির উৎস প্রায় সম্পূর্ণভাবেই ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল। মার্সি কর্পসের তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৩০ মিটার পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে। প্রাকৃতিকভাবে পুনরায় যে পরিমাণ পানি সরবরাহ সম্ভব, কাবুল তার চেয়ে বছরে প্রায় ৪৪ মিলিয়ন ঘনমিটার বেশি ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করছে। এ বিশাল অসমতা শহরের পানি ভান্ডার যেমন শুষে নিচ্ছে, তেমনি নিঃশেষ করে দিচ্ছে বাসিন্দাদের অর্থনৈতিক সঞ্চয়ও।