ইতোমধ্যে বিশ্বের অনেক দেশে শুরু হয়েছে সুপেয় পানির সংকট। আফগানিস্তানের কাবুল প্রথম কোনো দেশের রাজধানী হিসেবে পানিশূন্য হওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। আর এই পানি সংকট বাংলাদেশের সামনে এক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। তথ্য বলছে, বিশ্বের মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ মিঠাপানি সরাসরি মানুষের ব্যবহার উপযোগী। জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় সেই পানিতেও মিশছে লবণাক্ততা। ফলে পানি সংকট আরও তীব্র হচ্ছে। ইতোমধ্যে পানি নিয়ে সারা বিশ্বে শুরু হয়েছে সীমান্ত রাজনীতি। বাধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি, যার অন্যতম ভুক্তভোগী খোদ বাংলাদেশ। এত কিছুর পরও দূষণ ঠেকানো গেলে শুধু পানি বিক্রি করেই বাংলাদেশ আয় করতে পারে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ২ দশমিক ২ বিলিয়ন মানুষ নিরাপদ পানির সরবরাহ থেকে বঞ্চিত। অন্যদিকে জাতিসংঘ পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ পানির চরম সংকটে পড়বে। সেখানে বছরে গড়ে ২ হাজার ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত, সহস্রাধিক নদীনালা, অসংখ্য খাল-বিল, হাওড়-বাঁওড় ও জলাভূমি মিলিয়ে বাংলাদেশে রয়েছে সুপেয় পানির বিপুল ভান্ডার। তথ্য বলছে, বাংলাদেশের নদনদীর মাধ্যমে প্রতিবছর প্রায় ১ হাজার ২০০ বিলিয়ন ঘন মিটার পানি প্রবাহিত হয়, যা বিশ্বের অনেক বড় নদীব্যবস্থার চেয়ে বেশি। এসব পানির বিশাল অংশ সামান্য পরিশোধনেই ডব্লিউএইচও এবং আইএসও মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে পারে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও সিলেট অঞ্চলের পানিতে পিএইচ ও টিডিএসের মাত্রা স্বাভাবিকভাবেই বোতলজাতকরণের উপযোগী। টাঙ্গুয়ার হাওর ও সুরমা-কুশিয়ারা অববাহিকার পানির পিএইচ লেভেল ডব্লিউএইচও সুপারিশকৃত পিএইচ লেভেলের অনুরূপ। সামান্য পরিশোধনেই এই এলাকার পানি বোতলজাত করে রপ্তানি করা সম্ভব। এজন্য এসব অঞ্চলের পানিকে বলা হচ্ছে ব্লু গোল্ড বা নীল সোনা।
২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী বোতলজাত পানির বাজারের আকার দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০৩০ সালের মধ্যে এই বাজারের পরিধি ৫২৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশগুলো- যেমন সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিশুদ্ধ, হালাল ও মিনারেলসমৃদ্ধ পানির চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। চীন ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশেও বিশুদ্ধ বোতলজাত পানির বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। এসব অঞ্চলে হিমবাহ থেকে সংগৃহীত এক লিটার প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডের পানির দাম বর্তমানে এক থেকে পাঁচ ডলার পর্যন্ত। বাংলাদেশের এই বিপুল পানিসম্পদকে প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত করা গেলে বিশ্বের অন্যতম পানি রপ্তানিকারক দেশ হবে বাংলাদেশ।