মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার পূর্বদিকে অবস্থিত ডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক। নাম শুনলেই মনে হয় মৃত্যু আর ভয়ংকর শুষ্কতার রাজত্ব। এখানে গ্রীষ্মে তাপমাত্রা ৫৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে; যা পৃথিবীর অন্যতম উষ্ণতম স্থান। কিন্তু এই নির্জন মরুভূমিতে রয়েছে রহস্যময় চলমান পাথর, যা একসময় বিজ্ঞানীদের মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছিল।
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে- পাথরগুলো মরুভূমির সমতল মাটির ওপর দিয়ে নড়াচড়া করে কিন্তু কেউ কখনো তাদের চলতে দেখেনি। কয়েক মাস বা কয়েক বছর পর ওই জায়গায় ফিরে গেলে দেখা যায়, পাথরটি আগের জায়গা থেকে সরে গেছে এবং পেছনে মাটির ওপর তৈরি হয়েছে আঁকাবাঁকা দাগ, যেন পাথরটি হেঁটে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গিয়েছে। এই রহস্য প্রথম নজরে আসে ১৯১৫ সালের দিকে। এক পর্যটক রেসট্রাক প্লায়া নামের একটি এলাকায় এমন পাথর দেখে অবাক হন। ১৯৪০-এর দশকে বিজ্ঞানীরা এটি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন কিন্তু দীর্ঘদিন এর সঠিক ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারেননি।
কেউ বলতেন প্রবল ঝড়ো হাওয়া পাথরগুলো ঠেলে নিয়ে যায়, কেউ মনে করতেন ভূমিকম্পের কম্পনে এগুলো সরে যায়। কিছু মানুষ বিশ্বাস করতেন মরুভূমির বিশেষ চুম্বকীয় শক্তি পাথরকে টেনে নেয়। অনেকে একে ভিনগ্রহবাসীর কাজ বলেও দাবি করেন। ২০১৪ সালে নাসা ও ক্যালিফোর্নিয়ার একদল বিজ্ঞানী জিপিএস ট্র্যাকার এবং টাইম-ল্যাপ্স ক্যামেরা ব্যবহার করে রহস্যের সমাধান করেন। প্রমাণ পাওয়া যায়, শীতকালে রাতে রেসট্রাক প্লায়া এলাকায় পাতলা বরফের স্তর জমে, যা দিনের বেলায় সূর্যের তাপে ধীরে ধীরে গলে যায়। বরফ গলতে শুরু করলে, হালকা বাতাস ও ভাসমান বরফের টুকরো পাথরগুলোকে ধীরে ধীরে সরিয়ে নেয়। এই নড়াচড়া এত ধীরে হয়, যে খালি চোখে বোঝা যায় না। পৃথিবীতে এমন ঘটনা আর কোথাও এত সুস্পষ্টভাবে দেখা যায় না, যেখানে বিশাল ও ভারী পাথর নিজেরাই ধীরে ধীরে সরে যায়। বর্তমানে রেসট্রাক প্লায়া এলাকা কঠোরভাবে সংরক্ষিত। এখানে পাথর সরানো, তোলা বা দাগ নষ্ট করা নিষিদ্ধ। কারণ এটি কেবল একটি ভূতাত্ত্বিক বিস্ময় নয়, বরং প্রকৃতির সূক্ষ্ম ও ধৈর্যশীল শিল্পকর্মের নিদর্শন।
লেখক : পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়