প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, ওষুধ সংকট, রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা না থাকায় বাগেরহাট ২৫০ শয্যা সরকারি হাসপাতালে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা। জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে রোগীরা যাচ্ছেন খুলনা-ঢাকার বিভিন্ন বড় হাসপাতালে। ফলে রোগী ও স্বজনরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনই পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। জেলা ২৫০ শয্যা সরকারি হাসপাতালটিতে ২২০ চিকিৎসক থাকার কথা। এখন আছে মাত্র ২১ জন। চিকিৎসকের ১৯৯ পদই শূন্য। চিকিৎসকের অভাবে জানুয়ারি থেকে ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিটও বন্ধ। এ হাসপাতালে ৫০০ জন পর্যন্ত রোগী নিয়মিত ভর্তি থাকছেন। জেলার ১৮ লাখ মানুষের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্রটিতে সমস্যার শেষ নেই। সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালটির টিকিট কাউন্টার, জরুরি বিভাগ, চিকিৎসকের কক্ষ, প্যাথলজি, ফার্মেসি, ওয়ার্ড, ফ্লোর সর্বোত্রই রোগীর উপচে পড়া ভিড়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। হাসপাতাল সূত্র জানায়, শুধু চিকিৎসকই নয়, ২০০ সেবিকার স্থলে আছে ৫০ জন। হাসপাতালটিতে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির ৩৭টি পদ শূন্য রয়েছে। সূত্র জানায়, নামে ২৫০ শয্যা হাসপাতাল হলেও চলছে ১০০ শয্যার জনবল দিয়ে। এই ১০০ শয্যার জনবলের মধ্যেও চক্ষু, এনেসথেশিয়া, সার্জারি, নাক-কান-গলা, কার্ডিওলজিসহ ৫৮টি প্রথম শ্রেণির পদের ৩৭টিই শূন্য রয়েছে। জুনিয়র কনসালটেন্টের ৭টি পদ খালি রয়েছে। নেই সিটি স্ক্যান, এমআইআর, ইকো, ইটিটি, ইউরোলজি, সিরাম ইলেকট্রোলাইট, থাইরয়ডের পরীক্ষা, লেবরোস্কপি মেশিন। মেশিন নেই ১০ বেডের ডায়লাইসিস ইউনিটেও। প্রয়োজনীয় ওষুধ সংকটও রয়েছে এই হাসপাতালে। ওষুধসহ অন্যান্য খাতে হাসপাতালটির জন্য ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকার কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৬ কোটি টাকা।
শরণখোলা উপজেলা থেকে আসা একরাম হোসেন জানান, ১০ দিন আগে মাকে ভর্তি করেছি। চিকিৎসক বলছেন সব পরীক্ষার ব্যবস্থা এখানে নেই, খুলনায় নিয়ে যান। টাকার ব্যবস্থা করতে না পারায় খুলনা নিতে পারিনি। শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা নিয়ে কচুয়া থেকে এসে এক সপ্তাহ আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ছলেমান ফকির নামে এক বৃদ্ধ। বেড না পেয়ে মেঝেতেই চলছে তার চিকিৎসা। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ওষুধ না থাকায় বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে হতদরিদ্র রোগীকে। বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার জানান, বাগেরহাট ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতাল হলেও সেই জনবল এখনো পাইনি। জেলা ২৫০ শয্যা হাসপাতালটিতে ২২০ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও এখন আছে মাত্র ২১ জন। চিকিৎসকের ১৯৯ পদই শূন্য। এখনো ১০০ শয্যার জনবলে চলছে এই হাসপাতালটি। আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। জনবলসহ অন্যান্য সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।