ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় জয়পুরহাট লাইব্রেরি ও ক্লাবের ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করে তালা লাগিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে ভবনে থাকা মূল্যবান প্রায় ২০ হাজার বই সরানো হয়নি। সেখানে থাকা বইগুলো পোকামাকড়ের আক্রমণে অচিরেই নষ্ট হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বইগুলো নিরাপদ স্থানে সরানো ও ভবনটি পুনর্নির্মাণের দাবি বইপ্রেমীদের।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৪৭ সালে জ্ঞান ও মেধা বিকাশের লক্ষ্যে শহরের শহীদ ডা. আবুল কাশেম ময়দানসংলগ্ন জেলা পরিষদের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয় জয়পুরহাট লাইব্রেরি ও ক্লাব। শুরু থেকেই এখানে স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষসহ পাঠক সংখ্যা ছিল অনেক। কিন্তু লাইব্রেরি ভবনটি দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় অনেকটা ভগ্নদশা ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। ছাদ ও দেয়ালসহ অনেক জায়গায় ধরেছে ফাটল, খুলে পড়েছে পলেস্তারা। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে তালা লাগিয়ে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে ভবনে থাকা ইতিহাস, ঐতিহ্য, উপন্যাস, নাটক, রম্য-রচনাসহ মূল্যবান প্রায় ২০ হাজার বই দ্রুত নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর না করায় পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের অভাব ও পোকামাকড়ের আক্রমণে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
ক্লাবের সদস্য আবদুল হামিদ বাবু বলেন, ‘ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় প্রায় সাত মাস আগে সিলগালা করে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু লাইব্রেরির মধ্যে অনেক মূল্যবান বই ও ফার্নিচার আছে। সেগুলো অন্য নিরাপদ জায়গায় হস্তান্তর করা প্রয়োজন। না হলে বন্ধ থাকায় উইপোকায় নষ্ট করতে পারে।’ লাইব্রেরির পাঠক কাঞ্চন হোসেন বলেন, ‘আমার বাবা এই লাইব্রেরিতে এসে বই পড়তেন। আমিও এখানকার নিয়মিত পাঠক ছিলাম। কিন্তু এখন লাইব্রেরি বন্ধ থাকায় আর বই পড়া হয় না। এখানে যত ধরনের বই আছে, তা নষ্ট হয়ে গেলে আগামী প্রজন্ম অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হবে।’ ডা. সাজ্জাদুল বারী নামে এক পাঠক বলেন, ‘এখানে ২০ হাজারের মতো বই আছে। এগুলো দেশের সম্পদ। বইগুলো সংরক্ষণসহ নতুন পাঠকদের কাছে উপস্থাপনের সুযোগ করে দিতে হবে।’ কাশেম ময়দান এলাকার বাসিন্দা লোকমান আলী বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত এ লাইব্রেরিতে অনেক মূল্যবান বই আছে। যা টাকা দিয়েও কিনতে পাওয়া যাবে না। পাঠকরা এখন বই পড়তে পারছে না। লাইব্রেরিটি ধ্বংসের মুখে।’জয়পুরহাট লাইব্রেরি ও ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাজা চৌধুরী বলেন, ‘ভবনটি ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে অনেক আলমারি ও বই রয়েছে। এত বই কোথায় রাখব? জায়গা তো লাগবে। প্রশাসন থেকে পরিদর্শন করে গেছে।’
জয়পুরহাট সরকারি গ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান মোর্শেদা বিনতে মামুন বলেন, ‘মূল্যবান বইগুলো নষ্ট হয়ে যাতে হারিয়ে না যায়, এজন্য জেলা প্রশাসক ব্যবস্থা নেবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।’
জেলা প্রশাসক আফরোজা আকতার চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি জেনে ভবনের বিষয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। সেখান থেকে কোনো বাজেট এলে পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা নাও যদি হয়, জেলা পরিষদের কোনো বাজেট থেকে ভবনটির সংস্কার করা হবে। বইগুলো দ্রত নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তর ও কমিটির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।