প্রতিষ্ঠার ১১ বছরেও কার্যক্রম চালু হয়নি পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। ভূমি অধিগ্রহণ, বৈদ্যুতিক সংযোগসহ নানা জটিলতা দেখিয়ে তিন দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে কাজ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর চাপ। প্রতিদিন ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ রোগী ভর্তি থাকে। শয্যাসংকটে রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অন্যদিকে মেডিকেল প্রকল্পের দফায় দফায় মেয়াদ বাড়ানোয় সরকারের ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। পাশাপাশি উন্নত চিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত ২৫ লাখ মানুষ। সংশ্লিষ্টরা জানান, পটুয়াখালী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল কম্পাউন্ডে সিসিইউ ভবনে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের যাত্রা হয় ২০১৪ সালে। একই বছরে একনেকে ৫৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প পাস হয়। পরে জমি অধিগ্রহণসংক্রান্ত জটিলতা কাটিয়ে ২০১৬ সালে শুরু হয় এ প্রকল্পের কাজ। ২০২০ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মহামারি করোনাসহ নানা কারণে দুই দফায় ২০২৩ সাল পর্যন্ত এর মেয়াদ বাড়ানো হয়। এ সময়ের মধ্যে অধিকাংশ ভবনের কাজ শেষ হলেও নির্মাণত্রুটির কারণে দেখা দেয় ছোটবড় ফাটল। দীর্ঘ সময় অব্যবহৃত থাকায় দেয়ালগুলোয় ড্যাম্প দেখা দিয়েছে। এসব মেরামত, মালপত্র কেনা, যন্ত্রপাতি স্থাপন ও বৈদ্যুতিক সংযোগের জন্য উপকেন্দ্র নির্মাণে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত আরও সময় বাড়ান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এরই সঙ্গে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পের সম্ভাব্য নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৬৫১ কোটি টাকা। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসা রোগীর চাপ দিনদিন বেড়েই চলেছে। অন্তত ১ হাজার রোগী বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগসহ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সেবা নিতে আসে। পটুয়াখালী ও বরগুনা দুই জেলার বেশির ভাগ রোগী সেবা নেয় পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এদিকে ক্রমান্বয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর চাপ। হাসপাতালটিতে প্রতিদিন ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ রোগী ভর্তি থাকে। ভর্তি রোগীর স্বজন রাহেলা বেগম জানান, তার চাচি শ^াসকষ্টের রোগী। তিনি দুই দিন ধরে ভর্তি আছেন হাসপাতালে। শয্যাসংকটে মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। শিশু ওয়ার্ডে রোগীর মা শিউলি বেগম বলেন, ‘আমার দেড় বছরের শিশু আরমানের ঠান্ডাজনিত সমস্যা। ভর্তি করিয়েছি, কিন্তু বেড পাইনি। তাই বাধ্য হয়েই এক বেডে দুই শিশু রেখে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।’রোগীর স্বজন রাহাত হাওলাদার বলেন, বোগীর চাপে মেঝেতে বিছানা বিছিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে অনেককে। ৫০০ শয্যা চালু হলে চাপ কমবে। পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলরুবা ইয়াসমিন লিজা বলেন, ‘এ হাসপাতাল ২০০৫ সালে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। ২০ বছরে ২৫০ শয্যা দিয়েই চলছে, কিন্তু রোগী ক্রমবর্ধমান। বর্তমানে ৬০০ রোগী আমরা নিয়মিত চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। শয্যাসংকটের কারণে রোগীর সেবা দিতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’ পটুয়াখালী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘অত্যাধুনিক এ হাসপাতাল ভবনের প্রায় ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ চলমান। জুনের মধ্যে কাজ শেষ করে কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা সম্ভব হবে।’