মানুষের অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর প্রকৃতির কঠিনতম পরীক্ষার গল্পগুলো সবসময়ই হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এমনই এক গল্প লিখলেন ব্রিটিশ পর্বতারোহী কেনটন কুল, যিনি ১৯তম বার মাউন্ট এভারেস্ট জয় করে নিজেই নিজের রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস গড়লেন। নেপালি নয় এমন কেউ এতবার এভারেস্টে পা রেখেছেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা আর নেই।
রবিবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় (জিএমটি ০৫:১৫) হিমালয়ের তুষারে ঢাকা শৃঙ্গ ছুঁয়ে যখন কুল চূড়ায় দাঁড়ালেন, তখন সেটি শুধু আর একটি সফল অভিযান নয়, এ যেন প্রকৃতিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া এক জয়গাথা।
২০০৪ সালে প্রথম এভারেস্ট জয়ের পর থেকে যেন শৃঙ্গজয়ের নেশায় কুল বারবার ফিরেছেন এই মৃত্যুকূপে। অথচ ১৯৯৬ সালে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় যখন চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, 'তুমি আর কখনো নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে না', তখনই বোধহয় নিজের সঙ্গে এক প্রতিজ্ঞা করেছিলেন কেনটন।
১৯তম আরোহণে পৌঁছেই কুল তার ইনস্টাগ্রাম পোস্টে জানিয়েছেন, 'আমি শীর্ষে! এটি শুধু আমার রেকর্ড নয়, এটি বিশ্বাসের জয়।'
এই রেকর্ড যুদ্ধ শুধু কুলের একার নয়। নেপালি কিংবদন্তি কামি রিতা শেরপা ও এবার নিজের ৩১তম আরোহণের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। হিমালয়ের হাওয়ায় যেন লেগে আছে রেকর্ড ভাঙার প্রতিযোগিতা।
একই সময়ে, যখন কেউ রেকর্ড গড়ছেন, তখনই অন্য কেউ চিরবিদায় নিচ্ছেন শ্বেতশুভ্র মৃত্যুছায়ায়। মাত্র ক’দিন আগেই এভারেস্টে প্রাণ হারিয়েছেন এক ফিলিপিনো ও এক ভারতীয় অভিযাত্রী। এই কঠিন পথের প্রত্যেক পদক্ষেপে থাকে মৃত্যু আর জীবনের সূক্ষ্ম সীমারেখা।
নেপাল সরকার এই মৌসুমে ৪৫৮ জনকে এভারেস্ট অভিযানের অনুমতি দিয়েছে। এর ফলে গড়ে উঠেছে এক বিশাল তাঁবুর শহর, যেখানে বিদেশি অভিযাত্রীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আছেন সাহসী নেপালি শেরপারা।
নেপালের বুক জুড়ে রয়েছে বিশ্বের ১০টি সর্বোচ্চ পর্বতের ৮টি। আর সেই পর্বতগুলো এখন শুধু চ্যালেঞ্জই নয়, হয়ে উঠেছে বাণিজ্য, গৌরব আর অদম্য মানসিকতার প্রতীক।
১৯৫৩ সালে হিলারি-তেনজিং-এর প্রথম জয়যাত্রার ৭২ বছর পর আজ কেনটন কুলের ১৯তম জয় আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, 'মানুষ হার মানে না, পাহাড়ও নয়।'
এভারেস্টের পথে পা ফেলা মানেই জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষায় অংশ নেওয়া। আর সেই পরীক্ষায় কেনটন কুল আবারও প্রমাণ করলেন, সীমা বলে কিছু নেই, যদি সাহস থাকে শৃঙ্গ ছোঁয়ার!
বিডি প্রতিদিন/মুসা