চাহিদার চেয়ে কোরবানির পশুর উৎপাদন বেশি। সরকার আশা করছে, ক্রেতারা ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে পশু কিনতে পারবেন। বিক্রেতারা বলছেন, গতবারের তুলনায় এবার পশুর দাম বেশি থাকবে। কারণ, লাম্পি স্কিন রোগে খামারিদের অনেক গরু মারা গেছে। তবে প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশুর দাম বাড়াতে এটি কৌশল। বিশেষজ্ঞরা বলেন, খামারি কোরবানির পশুর দাম বাড়ান না। মধ্যস্বত্বভোগীরাই নানা কূটকৌশলে পশুর দাম বাড়ায়। সরকার যতই কোরবানিযোগ্য পশুর উৎপাদন বাড়াক, তাতে দেশের ওপেন মার্কেটে তেমন একটা পরিবর্তন আসবে না। যতক্ষণ না ফড়িয়াদের দমন করা হবে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানিমল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডিন ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, খামারি পশুর দাম বাড়াতে পারেন না। দাম বাড়ায় মধ্যস্বত্বভোগীরা। খামারি কখনো ন্যায্য দাম পান। কখনো প্রতারিত হন। ফড়িয়াদের নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খামারি থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পশু পৌঁছাতে চার ধাপে দালালের মুখে পড়তে হয়। প্রথমত, দালাল সরাসরি কৃষকের গোয়াল থেকে পশু সংগ্রহ করে। দ্বিতীয়ত, দালাল পশুগুলো বিক্রি করিয়ে দেন একজন ব্যবসায়ীর কাছে। তৃতীয়ত, দালাল নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে নদী ও সড়কপথের স্থানীয় চাঁদাবাজদের ম্যানেজ করেন। সবশেষ ব্যবসায়ীদের পশু বিক্রির সময় হাঁটের দালালের শরণাপন্ন হতে হয়। এতে একটি পশু কিনতে ভোক্তাকে অতিরিক্ত দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা গুনতে হয়। সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর আসন্ন ঈদুল আজহায় পশু উৎপাদনের সংখ্যা প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, এবারে ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি পশু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যা গত অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৫ লাখ কম।
লক্ষ্মীপুরের খামারি জাকির পাটওয়ারী বলেন, গো-খাদ্যের দাম কয়েক গুণ বাড়ায় উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ভূসি ও খৈলের বস্তায় ৫০০ থেকে দেড় হাজার টাকা বেড়েছে। ২০২৪-এর ডিসেম্বর থেকে ২০২৫-এর মে পর্যন্ত এসব গো-খাদ্যের মধ্যে খৈল ও খড়ের দাম বেড়েছে ৭০ শতাংশ, ভূসিতে ৬৭ শতাংশ ও ঘাসের ৭২ শতাংশ দাম বেড়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান বলেন, আমরা আশাবাদি এবারে প্রত্যেক খামারি কোরবানির পশুর ভালো দাম পাবেন। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা খামারি ও ভোক্তা- উভয় দিক বিবেচনায় কাজ করেন।