ফাল্গুনের শেষ সময়েই হবিগঞ্জ শহরসহ জেলাজুড়ে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে রমজান মাসে বিশুদ্ধ পানির সংকটে দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। মূলত ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিনদিন নিচে নেমে যাওয়ায় বেশির ভাগ টিউবওয়েল ও পাম্প দিয়ে পানি উঠছে না। এ ছাড়া খাল-বিল, পুকুরসহ জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়া এর অন্যতম কারণ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিকে খাল-বিল ভরাট হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে হাওরে সেচ দেওয়ার জন্য অপরিকল্পিতভাবে শক্তিশালী সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন করা হচ্ছে। এতে দিনদিন পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, হবিগঞ্জ শহরের বেশির ভাগ বাসাবাড়িতেই টিউবওয়েল ও পাম্প দিয়ে পানি উঠছে না। কোনো কোনো টিউবওয়েল বা মোটর দিয়ে পানি উঠলেও তা পর্যাপ্ত নয়। কোনো কোনো টিউবওয়েল দিয়ে মাসখানেক আগেই পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষ, বিশেষত গৃহিণীদের। দৈনিক কাজসহ শিশু-বয়স্কদের গোসল ও খাওয়ার পানি নিয়ে চরম বিপাকে পড়ছেন অভিভাবকরা। এখন রমজান মাস চলায় এ দুর্ভোগ যেন দ্বিগুণ আকার ধারণ করেছে। যেসব বাসাবাড়ির মোটর পাম্প অথবা টিউবওয়েলে পানি উঠছে সেখানে ভিড় করছে সাধারণ মানুষ। শুধু শহর নয়, জেলার প্রতিটি উপজেলায় একই অবস্থা। বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট গ্রামাঞ্চলেও। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলগুলোয় তীব্র আকার ধারণ করেছে এ সংকট। সরেজমিনে বানিয়াচং উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, যেসব বাড়িতে মোটর কিংবা টিউবওয়েল দিয়ে পানি উঠছে, সেখানে পানি নেওয়ার জন্য ভিড় করছে লোকজন। বিশেষ করে ইফতার ও সাহরির আগে ভিড় বেশি হচ্ছে। একই অবস্থা জেলার চুনারুঘাট উপজেলায়। সীমান্তবর্তী এ এলাকাটিতে রয়েছে উঁচুনিচু একাধিক টিলা। এসব টিলায় বসবাস করা লোকজন বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে ভুগছে। শহরের অনন্তপুরের বাসিন্দা আবু ছালেক বলেন, ‘ফাল্গুনের শুরু থেকেই আমাদের বাসার মোটর পাম্প দিয়ে পানি উঠছে না। পরিবারের প্রায় ১৫ জন সদস্য নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হয়।’ একই এলাকার ইকবাল আহমেদ বলেন, ‘পুরাতন মোটরে ফাল্গুনের শুরুতেই পানি ওঠা বন্ধ হয়ে যায়। প্রতি বছরই এমনটা হচ্ছে।’ গৃহিণী আসমা বেগম বলেন, ‘রমজানে বিশুদ্ধ পানির জন্য ভুগতে হচ্ছে।’ যদিও অনেকে মনে করছেন এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র হয়েছে।
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তাহমিনা তানভীন বলেন, ‘যেসব এলাকায় পানি উঠছে না সেসব এলাকায় সরকারের পক্ষ থেকে গভীর নলকূপ স্থাপন করে দেওয়া হচ্ছে। পানির স্তর ধীরে ধীরে নিচে নামার কারণেই এ সংকট। এ থেকে উত্তরণে ভূগর্ভস্থ পানির চাপ কমাতে হবে। পুকুর-খাল-বিল ও জলাশয় ভরাট করা যাবে না। অব্যাহত রাখতে হবে খনন কার্যক্রম।’