জনবলসংকট ও পুরোনো লক্কড়-ঝক্কড় মেশিনপত্র নিয়ে চলছে নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের সর্ববৃহৎ এ রেলওয়ে কারখানার কার্যক্রম। আধুনিকীকরণের নামে এ কারখানার অবকাঠামো উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও দক্ষ কারিগর তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। দক্ষ জনবল এবং যন্ত্রপাতি সচল না হওয়ায় এ কারখানার কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হচ্ছে না, বলছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৮৭০ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ১১০ একর জমির ওপর নীলফামারীর সৈয়দপুরে এই রেলওয়ে কারখানা প্রতিষ্ঠা করে। স্থাপনের পর থেকে কারখানাটিতে উৎপাদন শুরু হয় কোচ, ওয়াগন, বয়লারসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। পাশাপাশি কোচ ও ওয়াগন মেরামতও করা হতো। কারখানাটি ছিল শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তাদের পদচারণে মুখরিত। স্বাধীনতার পরেও এ কারখানায় ২২টি শপে কাজ করতেন প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক। তবে বর্তমানে এ রেলওয়ে কারখানায় চলছে তীব্র জনবল সংকট। যন্ত্রপাতি থাকলেও দক্ষ কারিগর ও অপারেটরের অভাবে কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। কমে গেছে কোচ ও ওয়াগনের মেরামত কাজ। এখানে থাকা ২৯টি শপের ১৯৬টি যন্ত্র অকেজো। কারখানা আধুনিকীকরণের নামে অবকাঠামো উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও দক্ষ কারিগর তৈরির উদ্যোগ নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, দক্ষ জনবল নিয়োগ এবং যন্ত্রপাতি সচল না করলে কারখানার কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সম্ভব নয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কারখানায় প্রায় ২ হাজার ৮৫৯টি পদের বিপরীতে কর্মরত ৭১০ জন। মাত্র ২৫ শতাংশ জনবল দিয়ে বছরে মাত্র ৪০-৪৫টি ইউনিট মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে। অথচ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের ৮৯০টি কোচ মেরামতের লক্ষ্যে প্রতি মাসে ৭৫টি কোচ আউট টার্ন দেওয়া প্রয়োজন। কারখানার বিভিন্ন শপের ৭৭৯টি যন্ত্র অপারেটরে আছেন মাত্র ৩৬ জন। খায়রুল বাশারসহ কর্মরত কয়েকজন শ্রমিক বলেন, প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ একা করতে হচ্ছে। আমরা চাই আরও দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া হোক। তা না হলে কাজের মান ধরে রাখা সম্ভব নয়। যন্ত্রগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। একজন অপারেটরকে একসঙ্গে ২০-২৫টি মেশিন পরিচালনা করতে হচ্ছে।
কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক মোস্তফা জাকির হাসান বলেন, ‘আমাদের ৭৫ শতাংশ জনবল শূন্য। তবে ফেস-টু আধুনিকায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং নতুন জনবল নিয়োগ হলে সমস্যা অনেক কমে আসবে। এ-সংক্রান্ত ২০টি টেন্ডার ইজিপি পোর্টালে রয়েছে। এগুলো দ্রুত শেষ করার কাজ চলছে।