‘আমাদের যেহেতু অর্থ নাই, অস্ত্র নাই—আমাদের এই চোখের পানিকে মিসাইল বানিয়ে ইসরায়েলকে ধ্বংস করে দাও। গাজায় ছোট ছোট শিশুরা পানি, খাবারের অভাবে কাতরায়; আমরা সইতে পারি না।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সমাবেশে এসব কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহিদুল হক।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আয়োজিত কর্মসূচিতে দলমত নির্বিশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ জনতা অংশ নেয়।
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহিদুল হকের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. এনায়েত উল্লাহ পাটোয়ারীসহ বিভিন্ন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিশ্ব সভ্যতার নামে যারা মানবতা শেখায় তারা আজ ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে। আমরা হয়তো সরাসরি ফিলিস্তিনকে সাহায্য করতে পারবো না, তবে নিজ ও পরিবার থেকে ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করতে পারব। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এ দেশের মানুষ ফিলিস্তিনের পক্ষে ছিল এবং থাকবে। ফিলিস্তিনে মানবতা বিরোধী অপরাধ বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ ও বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবে।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. এনায়েত উল্লাহ পাটোয়ারী বলেন, আমাদের প্রতিবাদ ইসরায়েলি বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে, যারা ফিলিস্তিনে নারী, শিশু, বৃদ্ধাকে হত্যা করছে। বিশ্ববিবেক আজ নীরব। ওআইসি, জাতিসংঘ, আরবলীগ কোনো ভূমিকা পালন করছে না। আমরা আশা করি বিশ্ব বিবেক দাঁড়াবে এবং ফিলিস্তিনের পক্ষে কাজ করবে।
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, আজ আমাদের একটাই এজেন্ডা, গাজাবাসীকে রক্ষা করা। আরববিশ্ব রাজনৈতিক কারণে মানবতার পক্ষে কথা বলছে না। জায়োনিস্টরা জ্ঞানের জায়গায় বিচরণ করছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের মাধ্যমে তাদেরকে মোকাবিলা করতে হবে।
উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, আমরা ছাত্র জীবন থেকে ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্দোলন করছি কিন্তু কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারিনি। মানব সভ্যতায় এমন হত্যা পৃথিবীর আর কোথায় ঘটেনি। পৃথিবীর ১৪৮টি রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও জাতিসংঘ কেন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না? আরব লীগ, ইসলামী সহযোগী সংস্থা (ওআইসি) কে দ্রুত ফিলিস্তিনের পক্ষে পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় এসব সংস্থা ভেঙে দিতে হবে।
চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার বলেন, আমরা বাল্যকাল থেকে গাজায় আক্রমণ দেখছি। আন্তর্জাতিক মহল সকল বিষয়ে সরব কিন্তু ফিলিস্তিনের সময় তারা নীরব। জ্ঞান-বিজ্ঞানের মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হলে আমাদেরকে শক্তিশালী জনসম্পদ তৈরি করতে হবে। পুরো পৃথিবী থেকে ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করতে হবে।
তিনি বলেন, মানবতা বিরোধী কাজ যেখানেই হবে সেখানেই আমরা প্রতিবাদ করব। আমরা শুধু আল্লাহ পাকের কাছে দোয়া চাইলেই হবে না। যে জাতি যতক্ষণ নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করে না, ততক্ষণ আল্লাহও কিছু করেন না। কাজেই, ঐক্যবদ্ধ হয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানে তাদের সাথে পাল্লা দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। ইসরায়েলের উন্নতিকে টেক্কা দিতে হলে আমাদের সেভাবেই শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে, বিজ্ঞানী তৈরি করে দিতে হবে। টাকা নিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দিলে ইসরায়েলকে টেক্কা দেওয়া যাবে না। শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনের তীব্র পিপাসা থাকলেই ইসরায়েলকে টেক্কা দেওয়া সম্ভব হবে। তা না হলে তর্জন-গর্জন দিয়ে তাদেরকে দমানো যাবে না।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল