রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত শেরাটন হোটেল ভবনের নিজেদের শেয়ারের অংশ ১০ বছর পর বুঝে নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃপক্ষ।
এর মধ্যদিয়ে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা বোরাক-ডিএনসিসি প্রকল্পের শেরাটন হোটেল ভবনের শেয়ার বণ্টনে সমস্যার অবসান হলো।
গত বুধবার গুলশান নগর ভবনে হোটেল শেরাটন ও ডিএনসিসির মধ্যে দখল হস্তান্তরনামা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ডিএনসিসির পক্ষে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান। অন্যদিকে বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের পক্ষে স্বাক্ষর করেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন।
ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের উপস্থিতিতে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ সময় ডিএনসিসির পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান। বোরাক রিয়েল এস্টেটের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস পিএলসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. সাখাওয়াত হোসেন, বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের পরিচালক মো. সীমশাদ রহমান।
ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘যে কাজ আমি করলাম, ঢাকাবাসী মনে রাখবে। এটি একটি ঐতিহাসিক কাজ।’ এর আগে, যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন তারা কেন এটা করলেন না- এ বিষয়ে মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘শুধু খামখেয়ালি না, আমি অবাক হই। তারা কেন এটা করতে পারলেন না! আমি পারলাম, ওনারা করতে পারলেন না কেন?’ দীর্ঘদিন ধরে সিটি করপোরেশন যে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারিয়েছে, এ দায় কার- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন ব্যর্থতা তাদের। অফিসারদের কোনো দায় থাকে না।’
ডিএনসিসি নগর ভবনের অসম শেয়ার বণ্টন প্রসঙ্গে প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, নগর ভবনের শেয়ার নিয়েও ঝামেলা আছে। এটার সমাধানও দ্রুত করে ফেলব। এ ছাড়া সিটি সেন্টারেও অসম শেয়ার বণ্টন রয়েছে, সবগুলো একটা একটা করে ধরব। আমার কাজ হচ্ছে রাষ্ট্রের যে পরিমাণ হিস্যা যেখানে রয়েছে, যেগুলো থেকে সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়, সেগুলো আমি আদায় করে নেব। সেটা আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন। সরকার আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে কাজ করতে। আমি কাজ করব। কাজের মূল্যায়নের ভার মানুষের ওপর ছেড়ে দিলাম।
ডিএনসিসির তৎকালীন কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের কারণে নগর কর্তৃপক্ষ যেমন মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছিল, তেমনি হোটেল শেরাটনের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানও বছরের পর বছর লোকসানের মুখে পড়েছিল। এতে দেশের পর্যটন খাতেও ধাক্কা লেগেছিল। হোটেল শেরাটন ছিল বিদেশি পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল। আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও বিগত সরকারের আমলে একগুঁয়ে সিদ্ধান্তের কারণে দুই পক্ষই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছিল। অবশেষে ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে দ্রুত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ডিএনসিসির ন্যায্য হিস্যা বুঝে নিয়ে সব জটিলতার অবসান ঘটান। এর মধ্য দিয়ে হোটেল শেরাটন পরিপূর্ণভাবে পরিচালনায় আর কোনো বাধা থাকল না।
সরকারি আইন-বিধিবিধান ও সব ধরনের প্রশাসনিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই রাজধানীর বনানীতে সিটি করপোরেশনের জমিতে পাঁচ তারকা হোটেল শেরাটন নির্মাণ করেছে বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেড কোম্পানি। এ কাজে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার পূর্ব-অনুমতিও নেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে শেরাটন হোটেল ভবনে তাদের প্রাপ্য হিস্যা বুঝে নেওয়ার জন্য ২০১৫ সাল থেকে বারবার তাগিদপত্র দিয়েছে বোরাক রিয়েল এস্টেট। কিন্তু ভবনের শেয়ারের অংশ বুঝে না নিয়ে বাস্তবায়নকারী সংস্থা বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেডকে অহেতুক বিড়ম্বনায় ফেলতে অনেক সময় তৎকালীন ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ কতিপয় মিডিয়াকে ব্যবহার করে। এতে বোরাক রিয়েল এস্টেট কর্তৃপক্ষের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন