২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে সরকার গঠন করার ১ মাস ২০ দিনের মাথায় ‘বিডিআর বিদ্রোহ’ দমনের শোচনীয় ব্যর্থতায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার অধিকার ও যৌক্তিকতা হারিয়ে ফেলেছিল। তখন পরিস্থিতি ছিল সশস্ত্র বাহিনীর সরাসরি ক্ষমতা গ্রহণ করার অথবা সীমিত আকারে হলেও দেশে জরুরি অবস্থা জারি করার। সশস্ত্র বাহিনী তা করেনি। একজন জেনারেলসহ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন র্যাংকের ৫৭ জন অফিসারকে হত্যা করার পরও সশস্ত্র বাহিনী সরকারের কেশাগ্র পর্যন্ত স্পর্শ করেনি। তারা পিলখানায় আড়ালে-আবডালে, চিলেকোঠায়, নর্দমায় আশ্রয় নিয়ে বেঁচে থাকা অফিসার, জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা তাদের পরিবারকে উদ্ধার করতে কোনো অভিযানও চালায়নি। পিলখানায় বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বিডিআরের তথাকথিত বিদ্রোহীদের আঁধারের আচ্ছাদনে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছিল। এ ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন সরকারের ভিতরের লোকগুলোকে ধরে ফেললেই যেখানে সরকারের বারোটা বেজে যাওয়ার কথা, সেখানে পিলখানা থেকে সেনা পরিবারগুলোকে উদ্ধার ও বিদ্রোহীদের অস্ত্র সমর্পণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বেসামরিক প্রশাসনকে, অর্থাৎ বৃহৎ অর্থে আওয়ামী লীগকে। সেনাবাহিনীর পদক্ষেপ না নেওয়ার পেছনে অন্যান্য কারণের মধ্যে একটি তো নিঃসন্দেহে জাতিসংঘের শান্তি মিশনের লোভনীয় টোপ। তাই বলে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার লাশের ওপর দিয়ে এ টোপ গিলতে হবে? একসময় তো এ সুযোগ ছিল না, তখন কী সশস্ত্র বাহিনী জনগণের ট্যাক্সের অর্থে চলেনি?
যে সেনাবাহিনী তাদের ৫৭ জন অফিসারকে হত্যার পরও ঘটনার জন্য সন্দেহভাজন সরকারকে সমর্থন ও সহায়তা দান করে, সে সরকারের দাম্ভিক ও নিপীড়ক হওয়ার পথে আর কোনো বাধা থাকে না। ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত আওয়ামী সরকার প্রতিপক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে যত অত্যাচার, নির্যাতন চালিয়েছে, গুম করেছে, বিনা কারণে তথাকথিত ‘ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্সের’ (পরিচিত নাম ডিজিএফআই) টর্চার সেলে তাদেরই সহকর্মীসহ বহু লোককে বছরের পর বছর আটকে রেখেছে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের অবাধ লুণ্ঠন করেছে, সবকিছুর পেছনে সেনাবাহিনীর কর্তৃত্বশীল অংশের সমর্থন ছিল বলেই শেখ হাসিনা তার কথা ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজে ফ্যাসিবাদী রূপ প্রকাশ করেছেন। এ সমর্থন না থাকলে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ ২০২৪ পর্যন্ত চলতে পারত না। বহু আগেই আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটত। ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪-এর নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসাতে কী কী করেছে, তা এখন ওই সংস্থাটির সাবেক কর্মকর্তাদের মুখ থেকে বের হয়ে আসছে। শেখ হাসিনার অপকর্মের নিত্য সহযোগী ছিলেন সেনাবাহিনীর এমন বহু পদস্থ কর্মকর্তা অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গা-ঢাকা দিয়েছেন এবং গ্রেপ্তার হয়েছেন। পিলখানা ট্র্যাজেডি ২০০৯ সালে ফেব্রুয়ারিতেই হাসিনা সরকারের ক্ষমতায় থাকার নৈতিক যুক্তির অবসান ঘটিয়েছিল।
বাংলাদেশ রেকর্ড সৃষ্টির উর্বর এক ভূখণ্ড। ইতোমধ্যে বহু পণ্ডিত ও সমরবিশারদরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে পাঁচ বছরব্যাপী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও কোনো একটি যুদ্ধক্ষেত্রে একদিন বা দুদিনের এত অধিকসংখ্যক সৈন্য নিহত হওয়ার ঘটনা নেই। এত অল্প সময়ের মধ্যে আধুনিক যুদ্ধকৌশলে শত্রু বাহিনীর বিরুদ্ধে কামান ব্যবহার, বিমান থেকে বোমা ও গোলাবর্ষণ এবং স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহারের মতো প্রচণ্ড যুদ্ধেও কোনো সেনাদলকে নেতৃত্বদানকারী সেনাপতির নিহত হওয়ার ঘটনা নেই। আর পিলখানার মাত্র সাড়ে ৩৪৯ একর প্রাচীরবেষ্টিত স্থানে আধা-স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করে জেনারেলসহ এতগুলো অফিসারের নিহত হওয়ার ঘটনা রীতিমতো বিশ্ব রেকর্ড। ৯ মাসের কম সময় ধরে চলা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন যেমন একটি বিরল রেকর্ড ছিল, তেমনই রেকর্ড ছিল এত অল্প সময়ে যতসংখ্যক বাঙালিকে পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যরা হত্যা ও ধর্ষণ করার ঘটনা। যত রেকর্ডই ঘটুক না কেন, ২০০৯-এর ২৫ ফেব্রুয়ারি দরবার চলাকালে পিলখানায় ভয়াবহ ধরনের কিছু ঘটতে পারে, এর ছিটেফোঁটা গোয়েন্দা তথ্য যদি সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে না থেকে থাকে তাহলে এসব গোয়েন্দা সংস্থা পুষে জনগণের অর্থের অপচয় করা নিরর্থক। শেখ হাসিনার পুরো শাসনের মেয়াদে এসব গোয়েন্দা বাহিনী বিএনপি ও জামায়াতের বিরুদ্ধে দেশ ও জাতিবিধ্বংসী ষড়যন্ত্রের আলামত উদ্ধার করেছে ও জিহাদের কিতাব আবিষ্কার করে ‘খতিয়ে’ দেখা ছাড়া আর কিছুই করেনি।
যাই হোক ওপরের কথাগুলো আমার মূল আলোচনার পটভূমিমাত্র। সেনাবাহিনীর কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত পদস্থ অফিসারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনে শেখ হাসিনা ও তার দল রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও জনগণকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অবদমন করেছে। তা সত্ত্বেও ২০০৯-এর পর থেকে সাড়ে ১৫ বছরের দীর্ঘ সময়েও একটি নিপীড়িক শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল, যারা শাসনক্ষমতায় থাকার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) পক্ষে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি কেন? এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যদি সফল না হতো এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো যদি শেখ হাসিনার বেপরোয়া গুলি চালিয়ে ছাত্রদের আন্দোলন কোনোমতে দমন করতে সক্ষম হতো, তাহলে দেশে যে নারকীয়তা নেমে আসত তা সহজে অনুমেয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা হয়তো শেখ হাসিনার নির্দেশ পালন করত, তাতে নিঃসন্দেহে হতাহতের ঘটনা আরও বৃদ্ধি পেত। কিন্তু বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা কয়েকটি স্থানে হামলাকারী পুলিশের আগ্রাসি মনোভাবে এত ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছিল যে তাদের সঙ্গে স্থানীয় জনতাও পথে নেমে আসে এবং বিপুল জনতার রোষ নেমে আসে পুলিশের ওপর। কারণ তারাই স্থানীয়ভাবে স্বৈরাচারীর প্রতীক। তারা ঢাকা ও আশপাশের কয়েকটি স্থানে পুলিশের ওপর চড়াও হয়, তাদের মারধর করে এবং নিহত পুলিশ সদস্যদের লাশ গাছের ডালে, বৈদ্যুতিক খুঁটিতে, ফুটওভার ব্রিজে ঝুলিয়ে রাখে, যা কখনোই কাম্য ছিল না। কিন্তু সময়ের উত্তাপে কারও ওপর কারও নিয়ন্ত্রণ ছিল না। আর কোনো উপায়েই, কোনো শক্তি প্রয়োগে ক্ষমতার কেন্দ্রগুলোর দিকে ধেয়ে আসা তরুণদের কোনোভাবেই আর সামলানো সম্ভব নয় দেখে জীবন বাঁচাতে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে পালাতে হয়েছে। ক্ষমতার দাপটে তিনি এতটাই মদমত্ত ছিলেন, তাকে কোনো শক্তি ক্ষমতার মসনদ থেকে অপসারিত করতে পারে, তা তার মস্তিষ্কে প্রবেশের সুযোগ ছিল না। চারদিকের তোষামোদকারীদের কথায় তিনি হয়তো নিজেকে চৌথা আসমানে দেখেছেন। তবে এ ক্ষেত্রে তার অধীন সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এবং সাড়ে পনেরো বছর ধরে তার পোষ্যবৎ ছাত্রলীগের গোপন বাহিনীও যে দেশের সর্বত্র বৈষম্যের অভিযোগ উত্থাপনকারী ছাত্রদের প্রকৃত মনোভাব আঁচ করে পরিস্থিতি সম্পর্কে শেখ হাসিনাকে বা তার সরকারকে জানাতে পারেনি, সেটিও বড় ধরনের আরেকটি গোয়েন্দা ব্যর্থতা। ভবিষ্যতে কোনো গণমুখী, দুর্নীতিমুক্ত সরকারের কপালে এমন দুর্দশা নেমে না আসুক। ছাত্রবিপ্লব সফল হয়েছে, জনগণের বিজয় সাধিত হয়েছে। দেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগপর্যন্ত দেশ পরিচালনার উদ্দেশ্যে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
খালি মাঠে গোল দেওয়ার মাধ্যমে যেকোনো সাফল্যের কৃতিত্ব দাবি করার লোকের অভাব নেই বাংলাদেশে। ছাত্র-জনতার বিপ্লব সফল হওয়ার পর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সাফল্যের কৃতিত্ব দাবি করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। জামায়াত এ দাবিটা করেছে বেশি। বিএনপি যখন বুঝতে পারল যে এ কৃতিত্ব দাবির ক্ষেত্রে তারা একটু পিছিয়ে পড়েছে, তখন তারা বলতে শুরু করল, ‘সাফল্য! এত সোজা, আমরা ছিলাম বলে!’ শুধু দাবি নয়, তারা এমন সুরে কথা বলতে শুরু করেছে যে অন্তর্বর্তী সরকারকে তাদের আদেশ-নিষেধ ও পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, সরকারব্যবস্থাসহ অনেক বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব করার জন্য কমিশন গঠন করেছিল এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর সংস্কার প্রস্তাবগুলো ইতোমধ্যে সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। সাড়ে ১৫ বছর ধরে গভীর শীতনিদ্রায় থাকা অথবা পাকিস্তান আমলে যখনতখন কমিউনিস্ট নেতাদের আত্মগোপনে (আন্ডারগ্রাউন্ড, যার বাংলা অর্থ গুহাবাসী বা গর্তবাসী বলা যেতে পারে) চলে যাওয়ার ঘটনার মতো বিএনপির গুহাবাসী নেতারা সদর্পে মাঠে অবতীর্ণ হয়ে সরকারের উদ্দেশে দিকনিদের্শনামূলক বক্তব্য দিতে শুরু করেছেন। জীবনানন্দ দাশের মতো বিএনপি নেতাদের প্রশ্ন করা যেতে পারে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
আওয়ামী লীগ সুদূর অতীত থেকেই সব নির্বাচনে কারচুপি, ভোট ডাকাতি ইত্যাদির মাধ্যমে ‘বিপুল ভোটে বিজয়ী’ হয়ে দাবি করেছে যে ‘জনগণ আওয়ামী লীগকে পাঁচ বছরের জন্য ম্যান্ডেট দিয়েছে’, অর্থাৎ সামনে পাঁচ বছর পর্যন্ত তারা যা খুশি তাই করতে পারবে। তারা তা করেছে এবং যা খুশি করতে গিয়ে দেশের ও জনগণের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। ২০০৮ ও এর পূর্ববর্তী সময়ে অনুষ্ঠিত যে নির্বাচনগুলোতে বিএনপি পরাজিত হয়েছে, তাদের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতই বলে দেয় যে জনগণের বিরাট একটি অংশ আওয়ামী লীগকে পছন্দ করে না। যারা জনগণের বাকস্বাধীনতা, সমাবেশ করার স্বাধীনতা, বাধাহীনভাবে চলাফেরার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার আরোপিত বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে। তারা সরকারের আচরণের প্রতিবাদ করতে চেয়েছে, বিএনপি তাদের মৃদু কণ্ঠকে সোচ্চার করতে শোচনীয় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তাদের সমর্থকদেরও একটি অংশের সমর্থন হারিয়েছে তারা, অথবা নেতৃত্বের অযোগ্য ভেবেছে। ছাত্ররা স্বল্প সময়ের মধ্যে ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে তাদের হাজার হাজার বন্ধুর জীবন দেওয়ার ও পঙ্গত্ববরণের ঝুঁকি গ্রহণ করেছিল। তারা অকাতরে জীবন দিয়েছে, অনেকে চির পঙ্গুত্ববরণ করেছে। সে ক্ষেত্রে বিএনপির মতো একটি জনপ্রিয়, সরকার পরিচালনায় অভিজ্ঞ এবং পোড় খাওয়া নেতাদের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি রাজনৈতিক দল জনগণের ওপর জালেম সরকারের দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত অত্যাচারের অবসান ঘটাতে, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে তাদের পূর্ণ শক্তি নিয়ে রাজপথে নামল না কেন, সে প্রশ্ন জনগণের কাছে রয়েই যাবে।
এখন বিএনপি জোরেশোরে মাঠে নেমেছে। হাটবাজার দখল থেকে দেশজুড়ে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দখলদার ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কথা বলছে না। তাদের বড় নেতাদের সবাই আওয়ামী লীগের সুরে কথা বলছেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা বলছেন। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো সংস্কার মানতে রাজি নয়। তাদের মূল কথাÑ ‘সংস্কার করার কোনো অধিকার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। যতরকম সংস্কার করবে কেবল নির্বাচিত সরকার।’ বিএনপি এখনো তাদের ঘর গুছিয়েই সারেনি, তাদের সাড়ে ১৫ বছরের রাজনীতি ছিল বিবৃতিনির্ভর। দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক তৎপরতাহীনতায় দলটির নেতা-কর্মীদের অস্থিতে জং ধরেছে। আড়মোড়া ভেঙে তাদের সচল-সক্রিয় হওয়ার সুযোগ এসেছে। তারা যদি অন্তর্বর্তী সরকারের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ না করে আওয়ামী রাজনীতির পুনর্বাসনের দায়িত্ব পালন না করে নিজেদের ঘর গোছানো শুরু করে, তাহলেই তাদের পক্ষে সামনের নির্বাচনে ভালো ফলাফল লাভ করা এবং সরকার গঠন করা সম্ভব হতে পারে। গত বছরের জুলাই মাসের আগেও যেসব নেতা দল বেঁধে গলি পেরিয়ে প্রধান সড়ক পর্যন্ত আসতে পারেননি পুলিশের জালে আটকা পড়ার ভয়ে, তাদের মুখে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ভাষায় কথা বলা শোভা পায় না। রাজনীতি না করেও কেবল সবার জন্য চাকরির সুযোগ অবাধ করার দাবিতে তিন সপ্তাহে যাদের শত শত ব্যক্তি জীবন দিতে পারে, হাজার হাজার আহত হতে পারে, সে তুলনায় দেশ ও জাতির সামগ্রিক স্বার্থ নিয়ে কাজ করার দাবিদার প্রধান দল বিএনপি এবং অন্য দলগুলো জাতির ওপর অন্যায়ভাবে তিন মেয়াদে চেপে থাকা ফ্যাসিস্ট সরকারকে উৎখাত করতে কেন জীবনবাজি রাখতে পারল না, সেই আত্মসমালোচনা করে তাদের উচিত অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করা। বিএনপির প্রতি পরামর্শ থাকবে, সোজা পথে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া না করে রাজনৈতিক দক্ষতা প্রদর্শন করা। আবশ্যিক সংস্কার ও নির্বাচন প্রশ্নে তারা নিজেরা যাতে এমন কোনো জটিলতা সৃষ্টি না করে, যা দেশকে নতুন করে সংকট ও অচলাবস্থার মধ্যে ফেলতে পারে।
লেখক : নিউইয়র্কপ্রবাসী, সিনিয়র সাংবাদিক