ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে করা সব চুক্তি বাতিলসহ ২০ দফা দাবি জানানো হয়েছে। গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে এসব দাবি জানানো হয়। ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’-এর ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে পাঠ করা ঘোষণাপত্রে এই ২০ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
চারটি ভাগে দাবিগুলো তুলে ধরা হয়। প্রথম ধাপে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি পাঁচ দফা দাবি : ইসরায়েলের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করতে হবে। যুদ্ধবিরতি নয়, গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ও সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে। পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপে মুসলিম বিশ্বের সরকার ও ওআইসির মতো মুসলিম উম্মাহর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর কাছে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সব সম্পর্ক অবিলম্বে ছিন্ন করতে হবে। জায়নবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। গাজার মজলুম জনগণের পাশে চিকিৎসা, খাদ্য, আবাসন ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়াতে হবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরায়েলকে একঘরে করতে সক্রিয় কূটনৈতিক অভিযান শুরু করতে হবে। জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসনের অধীনে মুসলিমদের অধিকার হরণ, বিশেষ করে ওয়াকফ আইনে হস্তক্ষেপের মতো রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ওআইসি ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দৃঢ় প্রতিবাদ ও কার্যকর কূটনৈতিক অবস্থান নিতে হবে।
তৃতীয় ধাপে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ছয় দফা দাবি জানানো হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশি পাসপোর্টে ‘এক্সেপ্ট ইসরাইল’ শর্ত পুনর্বহাল করতে হবে এবং ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার অবস্থান আরও সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে। সরকারের ইসরায়েলি কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যত চুক্তি হয়েছে তা বাতিল করতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং আমদানি নীতিতে জায়নবাদী কোম্পানির পণ্য বর্জনের নির্দেশনা দিতে হবে। ইসরায়েলের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের অধীনে মুসলিম ও অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে। পাঠ্যবই ও শিক্ষানীতিতে আল-আকসা, ফিলিস্তিন এবং মুসলিমদের সংগ্রামী ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
ঘোষণাপত্রের চতুর্থ ধাপে মুসলিম ভূখণ্ডের নাগরিক, এই কওমের সন্তান এবং সর্বোপরি মুসলিম উম্মাহর সদস্যদের চার দফা দাবি মানার জন্য আহ্বান জানানো হয়। স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইসলায়েলি পণ্য বয়কটের আহ্বান জানানো হয়। বাংলাদেশের সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যারা প্রস্তুত করবে, তারা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সব প্রতীক ও নিদর্শনকে সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করবে- এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এমনভাবে গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয় যেন তারা নিজেদের আদর্শ ও ভূখণ্ড রক্ষায় জান ও মালের সর্বোচ্চ ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকতে পারে। ঘোষণাপত্রে অঙ্গীকার করা হয়, আমরা যেন বিভাজিত হয়ে না পড়ি। কারণ বিভক্ত জনগণকে দখল করতে দেরি হয় না।