মানুষের দুনিয়া-আখিরাতে বিভিন্ন বিপদের কারণ তার গুনাহ। তাই দুনিয়া-আখিরাতের নিরাপত্তার জন্য তাওবার বিকল্প নেই। এখানে তাওবার কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলো—
আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের পথ : পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্রতা অর্জন করে, তাদেরও ভালোবাসেন।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২২২)
জান্নাতে প্রবেশের পথ : আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তবে যারা তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের ওপর বিন্দুমাত্র জুলুম করা হবে না।’ (সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ৬০)
সত্যিকারের তাওবা গুনাহকে পুণ্যে পরিণত করে : খাঁটি তাওবার মাধ্যমে পাপগুলো পুণ্যে পরিগণিত হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তবে যারা তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে, পরিণামে আল্লাহ তাদের গুনাহগুলো পুণ্যে পরিণত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৭০)
অন্তরকে প্রশান্ত করে : আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং এই (পথনির্দেশ দেয়) যে তোমাদের প্রতিপালকের কাছে গুনাহর ক্ষমা প্রার্থনা করো, অতঃপর তাঁর অভিমুখী হও।
তিনি তোমাদের এক নির্ধারিত কাল পর্যন্ত উত্তম জীবন উপভোগ করতে দেবেন এবং যে কেউ বেশি আমল করবে, তাকে নিজের পক্ষ থেকে বেশি প্রতিদান দেবেন। আর তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে আমি তোমাদের জন্য এক মহা দিবসের শাস্তির আশঙ্কা করি।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৩)
আরশ বহনকারীরা তাওবাকারীদের জন্য দোয়া করে : তাওবাকারীর এই বিশেষ মর্যাদা সম্পর্কে কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যারা (অর্থাৎ যে ফেরেশতারা) আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা তার চারপাশে আছে, তারা তাদের প্রতিপালকের প্রশংসার সঙ্গে তাঁর তাসবিহ পাঠ করে, তাঁর প্রতি ঈমান রাখে এবং যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করে (যে), হে আমাদের রব! তোমার রহমত ও জ্ঞান সমস্ত কিছু জুড়ে ব্যাপ্ত। সুতরাং যারা তাওবা করেছে এবং তোমার পথের অনুসারী হয়েছে, তাদের ক্ষমা করে দাও এবং তাদের জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করো।
হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের দাখিল করো স্থায়ী জান্নাতে, যার ওয়াদা তুমি তাদের সঙ্গে করেছ এবং তাদের পিতা-মাতা, স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্যে যারা নেক লোক তাদেরও...।’ (সুরা : গাফির, আয়াত : ৭-৯)
বান্দা বারবার তাওবা করলে তাওবা কবুল হয় : হাদিস শরিফে এসেছে, বান্দা যখন গুনাহ করে আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হয়ে বলে, ‘হে আমার রব, আমি পাপ করেছি, অথবা বলে, পাপে লিপ্ত হয়েছি, আমাকে ক্ষমা করুন। তার রব বলেন, আমার বান্দা কি জানে তার রব রয়েছে, যিনি পাপ ক্ষমা করেন ও তার জন্য পাকড়াও করেন? আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম।’ হাদিসে আছে, বান্দা পরবর্তী সময়ে গুনাহ করে একইভাবে ফিরে এলেও আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন। (বুখারি, হাদিস : ৭৫০৭)
অন্তর পরিশুদ্ধ করে : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বান্দা যখন একটি গুনাহ করে, তখন তার অন্তরের মধ্যে একটি কালো চিহ্ন পড়ে।
অতঃপর যখন সে গুনাহর কাজ পরিহার করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তাওবা করে, তার অন্তর তখন পরিষ্কার ও দাগমুক্ত হয়ে যায়। সে আবার পাপ করলে তার অন্তরে দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তার পুরো অন্তর এভাবে কালো দাগে ঢেকে যায়। এটাই সেই মরিচা, আল্লাহ তাআলা যার বর্ণনা করেছেন, ‘কখনো নয়, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের মনে জং (মরিচা) ধরিয়েছে।’
[সুরা : মুত্বফফিফিন, আয়াত : ১৪]। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৩৪)
আল্লাহ তাআলা তাওবায় অত্যন্ত আনন্দিত হন : আল্লাহ তাআলা তাঁর মুমিন বান্দার তাওবার কারণে ওই ব্যক্তির চেয়েও অধিক আনন্দিত হন, যে লোক ছায়া-পানিহীন আশঙ্কাপূর্ণ বিজন মাঠে ঘুমিয়ে পড়ে এবং তার সঙ্গে থাকে খাদ্য-পানীয়সহ একটি সওয়ারি। এরপর ঘুম থেকে সজাগ হয়ে দেখে, সওয়ারি কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেছে। তারপর সে সেটি খুঁজতে খুঁজতে তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ে এবং বলে, আমি আমার আগের জায়গায় গিয়ে চিরনিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে মারা যাব। (এ কথা বলে) সে মৃত্যুর জন্য বাহুতে মাথা রাখল। কিছুক্ষণ পর জাগ্রত হয়ে সে দেখল, পানাহারসামগ্রী বহনকারী সওয়ারিটি তার কাছে। (সওয়ারি ও পানাহারসামগ্রী পেয়ে) লোকটি যে পরিমাণ আনন্দিত হয়, মুমিন বান্দার তাওবার কারণে আল্লাহ তার চেয়েও বেশি আনন্দিত হন। (মুসলিম, হাদিস : ৬৮৪৯৮)
বিডি প্রতিদিন/মুসা