বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের গভীর অরণ্যে দুই বিরল ‘ট্রি স্নেক’ বা গেছো সাপের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান ও দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে চলমান এক বছরের সমীক্ষায় দেখা মিলেছে ডেনড্রেলাফিস সায়ানোক্লোরিস (Dendrelaphis cyanochloris) ও ডেনড্রেলাফিস হাসি (Dendrelaphis haasi) প্রজাতির সাপের।
শরীর সরু এবং অত্যন্ত দ্রুতগামী এই প্রজাতির সাপ নির্বিষ। দিনের বেলায় এরা প্রধানত গাছে থাকে। ডেনড্রেলাফিস সায়ানোক্লোরিসের একটি সাপকে প্রায় ১২ ফুট উচ্চতায় ঝিরির উপর একটি ডালে বিশ্রামরত অবস্থায় পাওয়া গেছে, আরেকটিকে পাথুরে ঝিরির ওপর বাঁশের ডালে দেখা গেছে। এই প্রজাতির শরীরের আঁশ জলপাই-সবুজ থেকে ব্রোঞ্জ রঙের হয়, এবং প্রসারিত হলে নীল আভা প্রকাশ পায়। এরা ছোট টিকটিকি ও ব্যাঙ খেয়ে বাঁচে এবং গাছে তিন থেকে পাঁচটি ডিম পাড়ে।
অন্যদিকে ডেনড্রেলাফিস হাসি প্রধানত রাতের বেলায় ঝিরির কাছে বাঁশের চিকন ডালে বিশ্রাম নেয়। এর শরীর জলপাই রঙের, মাথা সোনালি-বাদামি এবং জিহ্বা লাল। কখনো কখনো মানুষের বাসস্থানের কাছেও এদের দেখা মেলে।
গবেষকরা বলেন, বাংলাদেশে সাপের উপর গবেষণা সীমিত। দুই প্রজাতির উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে। তবে বন উজাড়, আবাসস্থলের ধ্বংস এবং মানুষ-বন্যপ্রাণী সংঘাত এই প্রজাতির জন্য বড় হুমকি।
উল্লেখ্য, এই সমীক্ষা ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচজন গবেষক—মো. সোহেল রানা, সজীব বিশ্বাস, আশীষ কুমার দত্ত, শারমিন আক্তার ও মো. কামরুল হাসান—দ্বারা সম্পন্ন হয়েছে। গবেষণার ফল পিয়ার-রিভিউড জার্নাল ‘Checklist’-এ প্রকাশিত হয়েছে।
এই দুই প্রজাতি আগে ভারত ও মিয়ানমারে পরিচিত ছিল, তবে বাংলাদেশে এদের উপস্থিতি নতুন। বিশেষ করে ডেনড্রেলাফিস হাসি প্রজাতির বাংলাদেশে উপস্থিতি ‘বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল