বাণিজ্যিকভাবে বর্ষাকালীন তরমুজ চাষ করে সফল হয়েছেন নেত্রকোনার কলেজ শিক্ষার্থী সারোয়ার আহমেদ সাইম। এলাকায় অসময়ে তরমুজের বাম্পার ফলনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তিনি। কম খরচে অধিক লাভের এই রসালো ফল চাষে তিনগুণ লাভ দেখে আগ্রহী হচ্ছেন অন্যরাও। এতে করে ধানের বিকল্প হিসেবে রবিশস্য ফসলের আবাদ বাড়ছে। তেমনি কৃষিতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন শিক্ষিত তরুণরাও। এতে কৃষি বিপ্লবের পাশাপাশি বেকারত্ব কমবে ও ঘুরবে অর্থনীতির চাকা- এমনটাই ভাবছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার গড়াডোবা ইউনিয়নের পাথারিয়া গ্রামের কৃষক আলী উসমানের সঙ্গে গত দুই বছর ধরে কৃষিতে যুক্ত হয়েছেন একমাত্র ছেলে সারোয়ার আহমেদ সাইম। তিনি কেন্দুয়া সরকারি কলেজে ডিগ্রির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বাবাকে সাহায্য করতে গিয়ে গ্রাম ছাড়িয়ে পুরো উপজেলায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন অসময়ে তরমুজ চাষ করে। অন্যান্য রবিশস্যের পাশাপাশি প্রায় চার একর জমিতে তিনি গত বছর সুগার কুইন নামের উচ্চফলনশীল তরমুজ চাষ করেন। ৫০ হাজার ৫০০ টাকা খরচ করে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। ৩০ বছর ধরে কৃষিকাজ করা বাবাকেও অবাক করেছেন তিনি। কৃষি অফিসের সহায়তায় বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে পরীক্ষামূলক চাষের পর এখন তিনি সফল চাষি। তার দেখাদেখি অন্যরাও এগিয়ে আসছে রবিশস্যসহ লাভজনক এমন ফসল আবাদে। ধানের তুলনায় অনেক কম বর্ষাকালীন তরমুজ চাষে কলেজ শিক্ষার্থীর সাফল্যসময়ে অর্থাৎ মাত্র ৭০ দিনে অধিক লাভজনক এই ফসল হয়। তাই অনেকে ধানের পাশাপাশি এখন রবিশস্যের মধ্যে তরমুজ চাষেও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এতে ধানের মৌসুম ছাড়াও সারা বছর শ্রমিক হিসেবে অনেকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। সাইম জানান, বাবা কৃষক আলী উসমান ৩০ বছর ধরে কৃষি কাজ করেন। তাই তিনি ছোট থেকে কৃষি দেখেই বড় হয়েছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি কৃষি বিষয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এরপর বাবার সঙ্গে ১৫ বিঘা অর্থাৎ ৫০ কাঠা জমি লিজ নিয়ে রবিশস্য আবাদ করছেন। তার মধ্যে সুগার কুইন নামের তরমুজ চাষ করে ফলন ভালো পেয়েছেন। দামও পেয়েছেন তিনগুণ। এ বছর তিনি আশা করছেন আরও অনেক বেশি। গত বছর অধিক লাভবান হওয়ায় এবার ১২০ শতক জমিতে ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে উচ্চফলনশীল বর্ষাকালীন এই তরমুজের চাষ করেছেন। আশা করছেন ১০ লাখ টাকায় বিক্রির। বাকি জমিতে রয়েছে বেগুন, দেশি লাউ, ঝিঙা, চাল কুমড়াসহ নানা জাতের সবজি। মালচিং পদ্ধতিতে জৈবসার বালাইনাশক দিয়ে আবাদে তার দেখাদেখি অন্যরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। চলতি বছর অতি বৃষ্টিতে কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়লেও ভয়ের কোনো কারণ নেই বলেন জানান তিনি। কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার বলেন, ‘শিক্ষিত তরুণদের কৃষির প্রতি আগ্রহ বাড়াতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন ফসল চাষেও তাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’
বিডি প্রতিদিন/এমআই