ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ও বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধ বন্ধে ২০ দফা পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকারি বাসভবন হোয়াইট হাউস। ট্রাম্প প্রশাসন বলেছে, ট্রাম্পের এ প্রস্তাব মানা হলে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ হবে, সেখানে ফিরবে শান্তি। স্থানীয় সময় সোমবার গাজায় শান্তি ফেরাতে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠক ও যৌথ সংবাদ সম্মেলনের পর ওই ২০ দফা পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ওই পরিকল্পনায় সম্মত হলেও গাজার স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের নেতারা জানিয়েছেন, তারা ট্রাম্পের ওই পরিকল্পনার কোনো লিখিত প্রস্তাবনা পাননি। এ অবস্থায় গাজায় সত্যিকার অর্থে শান্তি ফেরা নিয়ে অনেকের মনেই সন্দেহ রয়েছে। উপরন্তু ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হচ্ছে না এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে কোনো উদ্যোগ বলপ্রয়োগ করে হলেও ঠেকানো হবে বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এদিকে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে নতুন যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পেশ করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, সেটিকে স্বাগত জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। হোয়াইট হাউসের প্রকাশিত পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, উভয় পক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা মেনে নিলে তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধের অবসান এবং গাজায় জীবিত ও মৃত জিম্মিদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ফেরত দিতে হবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেওয়া হবে। ফিলিস্তিনি একটি টেকনোক্র্যাট সরকার অস্থায়ীভাবে গাজা উপত্যকা পরিচালনা করবে। তবে এই সরকারে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না। পাশাপাশি ইসরায়েল গাজা উপত্যকার কোনো ভূখণ্ড দখল করতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মেনে নিয়েছেন। তবে হামাসের কর্মকর্তা মাহমুদ মারদাবি কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে বলেছেন, গাজা শান্তি পরিকল্পনা লিখিত কোনো নথি পাননি তারা।
এদিকে ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় সম্মত হলেও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে কোনো উদ্যোগ ঠেকানো হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, হামাস যদি গাজাসংক্রান্ত তার ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে ইসরায়েলকে পূর্ণ সমর্থন দেবেন তিনি।’ গতকাল টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক ভিডিওতে নেতানিয়াহু বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে কোনো চুক্তি হয়নি।
ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনার কয়েক দফা নিম্নরূপ : গাজাকে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসমুক্ত অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হবে; যা প্রতিবেশীদের জন্য কোনো হুমকি তৈরি করবে না; উপত্যকাকে পুনর্গঠন করা হবে সেখানকার জনগণের কল্যাণের জন্যই পুনর্গঠন করা হবে; প্রস্তাবে যদি উভয় পক্ষ রাজি হয়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধ বন্ধ হবে, ইসরায়েলি বাহিনী জিম্মিদের মুক্তির প্রস্তুতির জন্য নির্ধারিত সীমারেখায় সরে যাবে। এ সময়ে সব ধরনের সামরিক অভিযান, বিমান হামলা ও কামানের গোলা নিক্ষেপ বন্ধ থাকবে, ধাপে ধাপে সেনা প্রত্যাহারের সব শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধরেখা স্থির থাকবে; ইসরায়েল প্রকাশ্যে এই চুক্তি মেনে নেওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত ও মৃত সব জিম্মিকে ফেরত দেওয়া হবে; সব জিম্মি ফেরতের পর ইসরায়েল যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ২৫০ জন বন্দি এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর নারী, শিশুসহ আটক ১ হাজার ৭০০ গাজাবাসীকে মুক্তি দেবে ও প্রত্যেক ইসরায়েলি জিম্মির মৃতদেহ ফেরতের বিনিময়ে ইসরায়েল ১৫ জন গাজাবাসীর লাশ ফেরত দেবে; সব জিম্মিকে ফেরত দেওয়ার পর হামাসের যেসব সদস্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবেন এবং অস্ত্র সমর্পণ করবেন, তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে; চুক্তি মেনে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে গাজায় পুরোপুরি মানবিক সহায়তা পাঠানো হবে; একটি অরাজনৈতিক, টেকনোক্র্যাট ফিলিস্তিনি কমিটির অস্থায়ী অন্তর্র্বর্তী শাসনের আওতায় গাজা পরিচালিত হবে; গাজার পুনর্গঠন ও উন্নয়নের জন্য ট্রাম্পের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করা হবে; গাজায় একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হবে, যেখানে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে শুল্ক ও প্রবেশাধিকার সুবিধা নির্ধারিত থাকবে; আরব ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে মিলে গাজায় তাৎক্ষণিকভাবে মোতায়েনের জন্য একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক বাহিনী ‘ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স (আইএসএফ) গঠন করা হবে। সূত্র : বিবিসি, জিও টিভি, টাইমস অব ইসরায়েল, আনাদোলু এজেন্সি।