শেষ পর্যন্ত শাটডাউন ঠেকাতে পারলো না যুক্তরাষ্ট্র। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের কার্যক্রম এখন বন্ধ হয়ে গেছে। সিনেটররা শেষ মুহূর্তের তহবিল বিল পাস করতে ব্যর্থ হওয়ায় সাত বছরের মধ্যে প্রথম বারের মতো শাটডাউন দেখলো যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন ডিসিতে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকেই মার্কিন ফেডারেল সরকারের শাটডাউন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে।
এর ফলে অপ্রয়োজনীয় খাতের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও জরুরি খাত যেমন সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের কাজ চালু থাকবে। তবে তারা আপাতত কোনো বেতন পাচ্ছেন না। ১৯৮০ সালের পর এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ১৫তম শাটডাউন হলেও এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। মঙ্গলবার মার্কিন সিনেটে মধ্যরাতের সময়সীমা অতিক্রম করে তহবিল বাড়ানোর জন্য ভোট ব্যর্থ হওয়ায় এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেডারেল কর্মীদের অপসারণের মেয়াদ বাড়ানোর হুমকি দেওয়ার পর মার্কিন সরকার একটি সরকারি শাটডাউনের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
শাটডাউন ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ৬০টি ভোটের মধ্যে ৫৫-৪৫ ভোটের ব্যবধানে বিল পাসে ব্যর্থ হয় সিনেট। শেষ মুহূর্তের সমাধান অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছিল, কারণ রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটরা তাদের বিভেদ দূর করার কোনো লক্ষণই দেখাতে পারেনি।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে বাজেট বিল নিয়ে তীব্র দ্বন্দ্ব চলছে। রিপাবলিকানদের প্রস্তাবিত একটি অস্থায়ী বিল ডেমোক্র্যাটরা নাকচ করে দেয়, কারণ তাতে স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের শর্ত ছিল না। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটদের প্রস্তাবিত বিল রিপাবলিকানরা আটকে দেয়, যেখানে অক্টোবর পর্যন্ত অর্থায়ন বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল। মঙ্গলবার রাতে রিপাবলিকানদের প্রস্তাবিত বিল ৫৫-৪৫ ভোটে ব্যর্থ হয়। ডেমোক্র্যাটদের প্রস্তাবও ৪৭-৫৩ ভোটে টিকতে পারেনি।
বিবিসি বলছে, ওয়াশিংটন ডিসির স্থানীয় সময় মধ্যরাত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়েছে সরকার শাটডাউন। সিনেটে শেষ মুহূর্তের অর্থায়ন বিল পাস না হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলো। এতে বহু সরকারি কর্মচারীকে বেতন ছাড়া ছুটিতে পাঠানো হতে পারে এবং বহু সরকারি কর্মসূচি ও সেবা কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে।
এছাড়া ২০১৮-১৯ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রে এটিই প্রথম সরকার শাটডাউন। তবে জরুরি পরিষেবা চালু থাকলেও জরুরি নয় এমন বিভাগ ও কর্মীরা এর বাইরে থাকবে। শনিবার রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে ব্যয়বাজেট প্রস্তাব গৃহীত না হওয়ায় দেশজুড়ে এই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, কোনও কারণে কংগ্রেস যদি ব্যয় বিল পাস করতে ব্যর্থ হয় বা প্রেসিডেন্ট সেই বিলে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন, তখনই ঘটে ‘শাটডাউন’। এ অবস্থায় বেশিরভাগ ফেডারেল সংস্থা খরচ চালাতে পারে না এবং অপ্রয়োজনীয় কার্যক্রম থেমে যায়।
তবে জাতীয় নিরাপত্তা, সীমান্ত সুরক্ষা কিংবা আকাশপথ নিয়ন্ত্রণের মতো জরুরি কার্যক্রম চালু থাকে। এমন অচলাবস্থার পেছনের মূল কারণ সাধারণত দলীয় দ্বন্দ্বই। ২০১৮–১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইতিহাসের দীর্ঘতম ৩৫ দিনের শাটডাউনের মুখে পড়েছিল।
তথ্যসূত্র : সিএনএন ও বিবিসি।
বিডি-প্রতিদিন/শআ