ফেনী শহরের প্রাণকেন্দ্র ট্রাংক রোডে দাঁড়িয়ে আছে গায়ে গা লাগানো মসজিদ আর মন্দির। কয়েক গজের ব্যবধানে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদ ও জয়কালী মন্দির। দেড় শ বছরেরও বেশি সময় এখানে পাশাপাশি চলছে নামাজ ও পূজা। অথচ একবারও ঘটেনি কোনো দ্বন্দ্ব, কোনো বিভেদ। বরং জায়গাটি হয়ে উঠেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জীবন্ত প্রতীক।
১৮৭৬ সালে ত্রিপুরার রাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর ধর্মীয় সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সমান অংশ জমি বরাদ্দ দেন মসজিদ ও মন্দিরের জন্য। সেই থেকে এই দুই উপাসনালয় পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে। ভোরবেলা ফজরের আজানে সমবেত হয় মুসল্লিরা। নামাজ শেষে তারা ঘরে ফেরেন। তার কিছুক্ষণ পরেই মন্দিরে ভেসে ওঠে শঙ্খ আর উলুধ্বনি। দুই ভিন্ন ধর্মীয় আহ্বান। অথচ পাশাপাশি প্রতিধ্বনিত হয়ে যেন গড়ে তোলে সম্প্রীতির সংগীত। স্থানীয় মুসল্লি আজিজ উল্লাহ আহমদী হাসিমুখে বলেন, আমরা মসজিদে নামাজ আদায় করি। ওদিকে মন্দিরে চলে পূজা। এটাই আমাদের বহু বছরের ঐতিহ্য।
মন্দির প্রাঙ্গণে পূজা দিতে আসা ভক্ত সুপ্রিয়া রানী দাসও জানালেন তার অভিজ্ঞতা। তিনি বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে দেখছি, একদিকে মসজিদে আজান হচ্ছে। অন্যদিকে আমাদের পূজা চলছে। কখনো ঝামেলা হয়নি। মুসলিম ভাইয়েরা আমাদের পূজার সময় সহযোগিতা করেন। আমরাও ঈদের আনন্দে শুভেচ্ছা জানাই। এভাবেই আমাদের সম্প্রীতি টিকে আছে। এখানে বসে পূজার মেলা। হয় ওয়াজ মাহফিল। জানাজাও আদায় করা হয়। মন্দিরের পুরোহিত নিমাই চক্রবর্তীও একই কথা জানান। তার ভাষায়, বিরোধ বা ঝামেলা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে আমরা সবাই আমাদের অনুষ্ঠান পালন করি। মন্দির কমিটির সভাপতি বিরাজ কান্তি মজুমদার বললেন, পূজার সময় আমরা মুসলিম ভাইদের নিমন্ত্রণ করি। তাঁরা আসেন। সহযোগিতাও করেন। কখনো বিরোধ হয়নি।
মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, এখানে হিন্দু-মুসলমানের কোনো ভেদাভেদ নেই। বিপদে-আপদে আমরা একে অপরের পাশে দাঁড়াই। জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, শত বছরেরও বেশি সময় ধরে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে এই মসজিদ-মন্দির। এখানে মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ধর্ম পালন করছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিদিন মানুষ আসে শুধু এই সম্প্রীতির নিদর্শন দেখার জন্য।