দৈয়ারা কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাবুটিপাড়া ইউনিয়নের একটি গ্রাম। ২৫ বছর আগে এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ তিনবেলা খাবার খেতে কষ্ট হতো। কারণ তাদের পর্যাপ্ত আয় ছিল না। কৃষিকাজে তেমন আয় হতো না। বাঁশ ও সুতার তৈরি দোলনায় চড়ে দূর হয়েছে সেই গ্রামের দারিদ্র্য। নারীরা ঘরের কাজের পাশে অবসরে দোলনা তৈরি করে আয় করছেন। ওই গ্রামে সারা বছর নারী-পুরুষের কর্মব্যস্ততার দৃশ্য চোখে পড়ে।
সরেজমিন দেখা যায়, গ্রামে ভাঙা সড়কের কাদার গর্তে সিএনজিচালিত অটোরিকশা আটকে গেছে। কয়েকজন ঠেলে সেটিকে উদ্ধার করে। এই বিব্রতকর দৃশ্যের পরেই চোখে পড়বে স্বস্তির চিত্র। বাড়ির আঙিনা, সড়কের পাশে সর্বত্র রঙিন দোলনা তৈরির উৎসব। কেউ সুতার বোঝা মাথায় নিয়ে যাচ্ছেন। কারও মাথায় বাঁশের চাক্কি (গোল করে বাঁধা সরু বাঁশের অংশ)। কয়েকটি কারখানায় সুতা ভাঁজ করা হচ্ছে। বাড়ির উঠানে নারীরা গল্প করতে করতে দোলনার সুতা বুনছেন। হালকা বাতাসে দুলছে প্রস্তুত করা রঙিন দোলনা। যে দোলনায় চড়ে বাড়িতে এসেছে সচ্ছলতা। পাশে দুই গাছের মাঝে বস্তা দিয়ে তৈরি দোলনায় দুলছে শিশুরা। এই দোলনা পাইকাররা নিয়ে যাচ্ছেন কুমিল্লা, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এই দোলনা বিদেশেও রপ্তানি হয় বলে কারিগররা জানান। ব্যবসায়ী মো. মহসিন মিয়া ও রাসেল ভূঁইয়া বলেন, ‘এই গ্রামে ২৫ বছর আগে কবির হোসেন ভূঁইয়া নামের একজন এই ব্যবসা শুরু করেন। তাকে দেখে অন্যরাও শুরু করেন। দৈয়ারার পাশের গাংরা, তেপুকুরিয়া, বাবুটিপাড়া, কৈয়ারপাড়সহ বিভিন্ন গ্রামে এই দোলনা তৈরির কাজ ছড়িয়ে পড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এক সময় অনেকে আমাদের কাজ দেখে হাসত। বলত, এগুলোর কী কাজ? এখন লাভ দেখে অনেকেই এই ব্যবসা করছেন। গ্রামের সড়ক বেহাল। এতে মাল পরিবহনে খরচ বেড়ে
যাচ্ছে। সড়ক দ্রুত সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।’ কারিগর রবিউল হোসেন ভূঁইয়া, সালমা বেগম ও মজিদ মিয়া বলেন, ‘আগে এক বেলা খেতাম। আটার জাউ খেয়ে থাকতে হয়েছে। এই কাজ শুরুর পর গ্রামের অভাব দূর হয়েছে। আগে পরিবারের একজন কাজ করতেন। এখন সবাই কাজ করতে পারেন। ভালো আয় হচ্ছে।’ তারা আরও বলেন, ‘ব্যবসায়ী আছেন ১০০ জনের বেশি। কারিগর আছেন হাজারের বেশি। তার মধ্যে নারী বেশি। এই গ্রামে এখন আর বেকার নেই। ভিক্ষুকও নেই বললেই চলে।’ স্থানীয় তীরচর মাদরাসার শিক্ষক মতিন সৈকত বলেন, ‘এই গ্রামের নারী-পুরুষ দোলনা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। দোলনা তৈরিতে দৈয়ারাসহ পাশের গ্রামে সচ্ছলতা এসেছে। এখানকার মানুষের এমন উদ্যোমী কাজ অন্য গ্রামের মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে। এই গ্রামের সড়কগুলো দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।’ কুমিল্লা বিসিকের ডিজিএম মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘দৈয়ারা গ্রামে দোলনা তৈরির বিষয়টি আমরা জেনেছি। এতে গ্রামীণ জনপদে সমৃদ্ধি এসেছে। তাদের প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহায়তাসহ যে কোনো বিষয়ে সহযোগিতার চেষ্টা করব। তাদের সড়কের বেহাল অবস্থা নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কথা বলব।’