গ্রীষ্মের ফল হিসেবে প্রতিটি ঘরে ঘরে দেখা পাওয়া যায় আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুসহ নানা ফলের। সেই সঙ্গে এই গরমে স্বল্প সময়ের অতিথি হয়ে আসে ফুটি বা বাঙ্গি। তবে অন্যান্য ফলের তুলনায় ফুটি বেশ খানিকটা ব্যাক ফুটেই থাকে। তার অন্যতম কারণ হলো এর স্বাদ।
রসালো বা মিষ্টি কোনোটাই তেমন নয় ফুটি। তবে স্বাদ যেমনই হোক, কার্যকারিতায় ফুটি অনেকটাই এগিয়ে। ত্বকের যত্নেও এই ফলের জুড়ি মেলা ভার। খেলে যেমন উপকার, তেমনি ত্বকে মাখলেও পাওয়া যায় নানা উপকার। বাজারে এখন নানা আকৃতির ফুটি বা বাঙ্গি পাওয়া যাচ্ছে। ফুটি বা বাঙ্গিতে কী কী স্বাস্থ্যগুণ, তা জানাতেই আজকের প্রতিবেদন। চলুন, জেনে নেওয়া যাক।
ফুটির পুষ্টিগুণ
গরমের ফল ফুটিতে আছে উচ্চমাত্রার বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, বি কমপ্লেক্স এবং সি, ফলিক এসিড, কপার, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক ও ক্যালসিয়ামের মতো কিছু জরুরি খনিজ। এগুলোতে রয়েছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ডায়েটরি ফাইবার ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টস। তাই নিয়মিত ফুটি খেলে যে দেহে পুষ্টির ঘাটতি মিটে যাবে, তা তো বলাই বাহুল্য।
পানিশূন্যতা দূর করে : গরমে ত্বকও পানিশূন্য হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে বের হয়ে যায় প্রয়োজনীয় কিছু খনিজ। পানি খেয়ে ভেতর থেকে ত্বক আর্দ্র করে তোলার পাশাপাশি বাইরে থেকেও আর্দ্র করে তুলতে এই ফল কার্যকরী। ফুটিতে পানির পরিমাণ অনেক বেশি। ফলে ত্বকও আর্দ্র থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে চাঙ্গা রাখতে পারলে একাধিক সংক্রামক রোগের ফাঁদ এড়িয়ে চলা যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে ফুটি। এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কাজে সিদ্ধহস্ত।
চোখের জন্য মহৌষধ : ফুটিতে রয়েছে ভিটামিন এ-এর ভাণ্ডার। আর এই ভিটামিন দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর কাজে সিদ্ধহস্ত। এমনকি বয়সজনিত চোখের সমস্যা দূর করার কাজেও এর জুড়ি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আর একাধিক গবেষণাতেও এই বিষয়টি ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়ে গেছে। তাই চোখের খেয়াল রাখতে চাইলে আপনার খাদ্যাভ্যাসে অবশ্যই ফুটির অন্তর্ভুক্তি জরুরি।
হার্টের বন্ধু : এখন কম বয়সেও অনেকে হার্ট অ্যাটাক ও অ্যারিদমিয়ার মতো জটিল অসুখে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই হৃৎপিণ্ডের খেয়াল রাখার কাজে আপনার সহযোগী যোদ্ধা হতে পারে ফুটি। এই ফলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম, যা ব্লাড প্রেশার কমানোর কাজে সিদ্ধহস্ত। আর ব্লাড প্রেশারকে স্বাভাবিকের গণ্ডিতে আটকে রাখতে পারলে হার্ট সুস্থ থাকবে।
ওজন কমাবে : ওজন বেশি থাকলে ডায়াবেটিস, হাই প্রেশার, কোলেস্টেরল থেকে শুরু করে কিছু বিশেষ ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। তাই যেভাবেই হোক ওজন কমাতে হবে। আর এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে ফুটি। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা ওজন কমাতে আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে : ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতেও ফুটি বেশ কার্যকরী। এতে থাকা ফলিক এসিড ত্বকের প্রতিটি কোষকে টক্সিনমুক্ত রাখে। ত্বকে সহজে বলিরেখা পড়তে দেয় না এটি। এ ছাড়া সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতি থেকেও রক্ষা করে এই ফল। দূর করে ব্রণ ও একজিমার সমস্যাও।
হজমে সাহায্য করে : ফুটিতে থাকা প্রচুর পরিমাণে পানি গরমে শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা খাদ্যআঁশ খাবার হজম করতে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। গরম ও অতিরিক্ত রোদের কারণে হওয়া সানবার্ন, সামার বয়েল, হিট হাইপার পাইরেক্সিয়া প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে।
রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে : ফুটিতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। তাই মানুষের জন্য, বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের জন্য এটি বিশেষ উপকারী ফল। এতে কোনো চর্বি নেই।
নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে : ভিটামিন বি এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ইন্সনিটোল, যা আমাদের নতুন করে চুল গজাতে সাহায্য করে এবং চুল পড়া প্রতিরোধ করে। এই উপাদানটি ফুটিতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। নিয়মিত ফুটি খেলে চুল হয় স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও সুন্দর।
ফুটি শুধু খাওয়াই যায় না, শরীরেও মাখা যায়। কিভাবে মাখবেন, এবং কী উপকার-
ত্বকের ব্রণের সমস্যা কিংবা একজিমা সমস্যায় যারা ভুগে থাকেন, তাদের জন্য এটি অনেক বেশি উপকারী। ফুটি ব্লেন্ডারে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিয়ে একটি পাতলা কাপড়ে ছেঁকে রসটুকু বের করে নিন। এ রস লোশনের মতো ব্যবহার করতে পারলে ব্রণ ও একজিমার সমস্যা থেকে রক্ষা পাবেন।
এছাড়া ত্বকে বয়সের ছাপ এবং ত্বক কুঁচকে যাওয়া প্রতিরোধ করতে ব্যবহার করতে পারেন ফুটি বা বাঙ্গি। এটি থেতো করে নিয়ে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। নিয়মিত ব্যবহারে পাবেন উজ্জ্বল সুন্দর ত্বক।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ