দক্ষিণগ্রাম। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার একটি পরিচিত গ্রাম। গ্রামের পদ্মবিল এর পরিচিতি বাড়িয়ে দিয়েছে। এ বিলে প্রতিদিন দর্শনার্থীর ভিড় জমে। এ গ্রামে আরেকটি ব্যতিক্রম দৃশ্যের দেখা মেলে গ্রামের উত্তর পূর্বপাড়ায়। এখানের সবজির জমিগুলো যেন হয়ে উঠেছে বিয়েবাড়ি। জমিতে প্রবেশে রয়েছে গেট। সেখানে লেখা ‘স্বাগতম’। সরেজমিন গ্রামের আবুল কাশেমের জমিতে গিয়ে দেখা যায়, বরবটির জমির চারপাশে নেটের বেড়া। জমিতে প্রবেশে রয়েছে গেট। গেটের পাশে লেখা ‘জমিতে খাওয়া, পানিপান ও ধূমপান করা যাবে না।’ নিকটবর্তী জমিতে মফিজুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলামও একই পদ্ধতিতে চাষ করেছেন।
আবুল কাশেম জানান, তিনি সাবেক সেনাসদস্য। অবসরে এসে সবজি চাষ করছেন। এবার প্রথম পার্টনার প্রকল্পের আওতায় উত্তম কৃষিচর্চার (গ্যাপ) মাধ্যমে সবজি চাষ করছেন। এবার তিনি বরবটি চাষ করেছেন। এত নিয়মকানুন দেখে প্রথমে অন্যরা হাসাহাসি করেছেন। তবে ভালো ফসল ও দাম বেশি পাবেন শুনে তাঁরাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন। জৈব বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সবজি চাষ করায় পরিবেশদূষণ কমছে। স্থানীয় কৃষক মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘এ গ্রামের কৃষকের সবজি চাষের পদ্ধতি দেখে প্রথমে বিস্মিত হয়েছি। পরে জানলাম স্বাস্থ্যসম্মতভাবে বিষমুক্ত উপায়ে এখানে ফসল উৎপাদন হচ্ছে। এতে পরিবেশদূষণ কমবে, মানুষ নিরাপদ সবজি পাবে এবং কৃষক ফসলের ভালো দাম পাবেন। আমিও এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করব।’ বুড়িচং উপজেলা কৃষি অফিসার আফরিনা আক্তার বলেন, ‘বুড়িচংয়ে প্রথমবারের মতো পার্টনার প্রকল্পের আওতায় গ্যাপ পদ্ধতিতে সবজি চাষ হচ্ছে। আমাদের উপজেলায় চারটি প্রদর্শনী রয়েছে। কৃষককে পার্টনার প্রকল্প থেকে উত্তম কৃষিচর্চার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা দিনদিন উত্তম কৃষিচর্চায় উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এতে তাঁদের ২০ ভাগ আয় বাড়বে।’ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, ‘পার্টনার প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার ১৭ উপজেলায় উত্তম কৃষিচর্চার মাধ্যমে ফসল উৎপাদন হচ্ছে। আমরা কৃষককে উত্তম কৃষিচর্চার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছি। জমিতে কৃষক জৈব বালাই ব্যবস্থাপনা ব্যবহার করছেন। মাটি পরীক্ষা করে সার দেওয়া হচ্ছে, যেন বেশি সার প্রয়োগে ফসল ও মাটির ক্ষতি না হয়। এতে মানুষ নিরাপদ ফসল পাবে, আমরা বিদেশে ফসল রপ্তানি করতে পারব এবং কৃষকও তাঁর পণ্যের ভালো দাম পাবেন।’