রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া। তার বড় বোন সাবিকুন নাহারও একই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। স্কুলের পাশেই তাদের বাসা। প্রতিদিনের মতো সোমবার সকালে বাসা থেকে নাশতা করে বড় বোনের সঙ্গে স্কুলে আসে জান্নাতুল। সঙ্গে দুপুরের খাবারও নিয়ে এসেছিল। দুপুরে খাবার শেষ করে দোতলা থেকে সে নিচতলায় কোচিংয়ের জন্য নেমে আসে। কোচিং ক্লাসে ব্যাগটি রেখে বারান্দায় বান্ধবীদের সঙ্গে কথা বলছিল। একটু পরই কোচিং শুরু হওয়ার কথা। ঠিক এই সময়ে হঠাৎ বিকট শব্দে জ্ঞান হারায় জান্নাতুল। এরপর কী হয়েছে আর কিছু বলতে পারছে না শিশুটি। তবে যখন তার জ্ঞান ফেরে তখন সে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিজেকে আবিষ্কার করে। জান্নাতুল বর্তমানে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের সপ্তম তলায় ৭৩১ বেডে ভর্তি রয়েছে। তাকে ঘিরে স্বজনরা বসে আছেন। তারা নানানরকম কথা বলে তাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন। তার ডান হাত পুড়ে গেছে। পুরো ডান হাত ব্যান্ডেজ দিয়ে মোড়ানো। তার মাথায়ও ব্যান্ডেজ। সেলাই লেগেছে চারটি। ১১ বছর বয়সি জান্নাতুলের চোখে-মুখে কেবলই আতঙ্কের ছাপ। জান্নাতুল বলছে, ‘বিমান বিধ্বস্ত ভবনের দ্বিতীয় তলায় শ্রেণিকক্ষ ছিল। দুপুরে স্কুল ছুটির পর খাবার খেয়ে কোচিংয়ের জন্য নিচতলায় নেমে আসি। ব্যাগ রেগে স্কুলের বারান্দায় যাই। সেখানে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছিলাম। ঠিক এই সময়ে বিকট শব্দে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এরপর কী হয়েছে তা বলতে পারছি না। জ্ঞান ফিরে দেখি আমি হাসপাতালে।’ হাসপাতালে কথা হয় জান্নাতুলের ফুফু রাবেয়া আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, জান্নাতুলের বাবা সাইফুল ইসলাম এসিআই কোম্পানিতে চাকরি করেন। তার মা সালমা আক্তার রুবি গৃহিণী। ওই দম্পতির তিন সন্তান। ছোট মেয়ে তাসনিমের বয়স আড়াই বছর। জান্নাতুল এবং সাবিকুন নাহার মাইনস্টোন স্কুলে লেখাপড়া করে। দুপুরে ছুটির পর সাবিকুন নাহার স্কুল থেকে বেরিয়ে বাসায় পৌঁছানোর আগেই বিকট শব্দ শুনতে এবং স্কুলে কালো ধোঁয়া দেখতে পায়। আর জান্নাতুল স্কুল ছুটির পর নিচতলায় কোচিং ক্লাসের জন্য অপেক্ষা করছিল। ঠিক এই সময় সে বিকট শব্দ শুনতে পায় এবং আহত ও দগ্ধ হয়। উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে আনা হলে তার বাবা তাকে দেখতে পান। কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ফারহানা বলছেন, ‘জান্নাতুল মাওয়ার অবস্থা অনেকটা ভালো। তার ডান হাত পুড়ে গেছে এবং মাথায় আঘাত পেয়েছে। তার চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বদা তৎপর রয়েছি। দগ্ধস্থানে শুকানো শুরু হলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।’ এদিকে জান্নাতুলের মতো আরেক শিক্ষার্থী আফিফাও শরীরের ক্ষত নিয়ে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া ১৪ বছর বয়সি আফিফার ডান হাত পুড়ে গেছে। তাকে হাসপাতালের দশম তলার ১০০৩ নম্বরে কেবিনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত। দ্রুতই ছেড়ে দেওয়া হবে। লুবানা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারের সহকারী ম্যানেজার মিরাজুন নবী চঞ্চল বলেন, ‘মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আমাদের হাসপাতালে ২৭ জনকে আনা হয়েছিল। দুজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। এদের মধ্যে একজনের নাম ছিল উমায়ের। তার বয়স ১১। ১২ জনকে বার্ন ইনস্টিটিউটে এবং দুজনকে ঢাকা সিএমএইচে রেফার করা হয়। একজনকে ভর্তি নেওয়া হয়েছিল। সবাইকে ফ্রিতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’ উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালের ম্যানেজার মো. মাহবুব আলম বলেন, ‘১৪-১৫ জন আহত অবস্থায় আমাদের হাসপাতালে এসেছিল। তাদের প্রত্যেককে ফ্রিতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’