রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজে কোনো ব্যত্যয় হয়নি বলে দাবি করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার। তিনি আরও বলেছেন, নিজ থেকে পদত্যাগ করার কোনো ইচ্ছা নেই। তবে সরকার (নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ) বললে চলে যাবেন। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথা জানান। এর আগে তিনি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে বৈঠক করেন। উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেন, সচিবকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে উচ্চতর কমিটির সিদ্ধান্তে। আমি এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। আমার কাজের কোনো ব্যত্যয় হয়েছে বলে আমি মনে করি না। আমার নিয়োগকর্তা রয়েছে। তারা যেতে বললে আমি অবশ্যই চলে যাব। আঁকড়ে ধরে থাকার কোনো ইচ্ছা আমার নেই।
শিক্ষা উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন কি না- এদিন এক সাংবাদিক জানতে চাইলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষা উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সেটা সরকারের সিদ্ধান্ত। এখানে কোনো রকমের অব্যবস্থাপনা হয়নি। প্রয়োজনে মামলা করেন, কোর্টে যান। ন্যূনতম সৌজন্যতা যদি না রাখেন তাহলে আমাদের পক্ষে কথা বলা সম্ভব হবে না।
পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা মধ্য রাতে দেওয়ায় মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে এবং সেজন্য আপনারা অনুতপ্ত হবেন কি না- জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, আমি যে ব্যাখ্যা দিলাম, তারা যদি ভেবে থাকেন ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন, তাদের সেই ধারণাটা পাল্টাবে বলে আমি মনে করি। বাস্তবে অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন এবং তাদের বাবা-মা রয়েছেন, তারা অসন্তুষ্ট হয়েছেন, পরীক্ষাটা কেন সময়মতো হলো না। এ বাস্তবতাটা কিন্তু রয়েছে। সেটাও একটু বিবেচনার মধ্যে নিতে হবে।
মাইলস্টোনের ঘটনার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ধরনের কমিটি গঠন বা শোক প্রকাশ করা হয়নি- এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, এ মন্ত্রণালয় হচ্ছে রাষ্ট্রের একটি অঙ্গ। যেখানে প্রধান উপদেষ্টা শোক প্রকাশ করেছেন, তার মানে সব মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রের যে প্রক্রিয়া তার হয়েই তিনি করেছেন। আমাদের মনে হয় আলাদাভাবে আমাদের করার কোনো অবকাশ হয়নি। মঙ্গলবার বিভিন্ন স্কুল-কলেজে দোয়া মাহফিলের প্রোগ্রাম ছিল। সেটা মন্ত্রণালয়ে যথাযথভাবে হয়েছে। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি সরকার করবে। এটা তো শুধু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিষয় না। এটা বৃহত্তর একটা বিষয়। যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক, সেটা কারোরই কাঙ্ক্ষিত নয়। এটা একটা দুর্ঘটনা, সেটা ঘটেছে। উপদেষ্টা বলেন, রাতে ঘরে ফিরছি তখন পরীক্ষার বিষয়টি সামনে এলো, আলোচনা হচ্ছিল পরীক্ষা পেছানো হবে কি হবে না। কেউ কেউ চাচ্ছিলেন পরীক্ষা হোক। এটা এমন একটা সিদ্ধান্ত, যেটা হুট করে নেওয়া যায় না। হুট করে এককভাবে কারও নেওয়ারও এখতিয়ার নেই। যেভাবে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য একটা রোল ডাউন করতে হয়, পরীক্ষা যদি না হয় সে ক্ষেত্রে রোল ব্যাক করার একটা বিষয় রয়েছে। একটা ধারণা হয়তো রয়েছে, একক সিদ্ধান্তে এটা অনেক আগেই দ্রুত করা যেত। এই ধারণাটা একেবারেই সঠিক নয়। ডিউ প্রসেস ফলো করে পরীক্ষা পেছানো হয়েছে। রাত আড়াইটা-৩টার দিকে সিদ্ধান্তটা হয়েছে। অনেক বাচ্চা বলেছেন, আমরা তো সেভাবে এফেক্টেড নই, আমরা চাই পরীক্ষাটা হয়ে যাক।
আমাদের সেটাও বিবেচনার মধ্যে নিতে হয়েছিল। মাইলস্টোন কলেজে অবরুদ্ধ থাকার ঘটনা নিয়ে বলেন, দুজন উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব সেখানে গিয়েছিলাম। সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমবেদনা জানাতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে। আমরা ছয় দফা দাবি পেয়েছিলাম। সেখানে কিছুটা উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। তবে তিনি বলেন, বল প্রয়োগ করে ক্যাম্পাস থেকে বের হতে চাইনি, প্রয়োজনে একদিন দুই দিন থাকারও মানসিক সিদ্ধান্তও ছিল আমাদের। সে হিসেবে আমরা অপেক্ষা করেছি। পরবর্তীতে আমরা চলে এসেছি। শিক্ষার্থীদের তুলে ধরা ছয় দফা দাবির কিছু আগেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের লাশ ও নিহত সংখ্যা নিয়ে আবরার বলেন, ঘটনাটা ঘটেছে একটা নির্দিষ্ট এলাকায়। যেখানে প্রতিটি ছাত্রের নাম তালিকাভুক্ত রয়েছে। শিক্ষকদের নাম রয়েছে, হাটবাজারে বা রেলস্টেশনে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে লাশ কাউন্ট করা মুশকিল হতো। আমরা ছাত্রদের তালিকা হস্তান্তর করতে স্কুল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছি।