পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) সভাপতি মহসিন নাকভি এখন ঢাকায়। পিসিবি সভাপতি এসেছেন এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) বার্ষিক সাধারণ সভায় অংশ নিতে। সভা শেষে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-পাকিস্তান টি-২০ সিরিজের শেষ ম্যাচটি দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। পিসিবি সভাপতির উপস্থিতিতে সালমান আগারা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন? না, লিটন দাসের নেতৃত্বে টাইগাররা হোয়াইটওয়াশ করবেন সফরকারীদের? ২০০৬ সাল থেকে নিয়মিত টি-২০ ক্রিকেট খেলছে বাংলাদেশ। এই প্রথম ২০০৯ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হোয়াইটওয়াশের সুযোগ হাতছানি দিচ্ছে বাংলাদেশকে। যদিও ১০ বছর আগে, ২০১৫ সালে এক ম্যাচের সিরিজটি জিতেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এবারই প্রথম হোয়াইটওয়াশের সুযোগ! এ সুযোগকে হেলায় হারাতে চাইছেন না টাইগার অধিনায়ক লিটন। টানা দুই ম্যাচ জিতে ইতোমধ্যে টি-২০ সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। এবার জিতলে হোয়াইটওয়াশ। এর আগে তিন ম্যাচ টি-২০ সিরিজে বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ করেছে দুই সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডকে। দুই ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছে আফগানিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সিরিজ জিতেছে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
দুই দলের ক্রিকেটাররা বিশ্রামে কাটিয়েছেন গতকাল। পাকিস্তানের বিপক্ষে যদি আজ সন্ধ্যা ৬টার ম্যাচটি জিতে যান টাইগাররা, তাহলে অধিনায়ক লিটনের নেতৃত্বে টানা দ্বিতীয় টি-২০ সিরিজ জিতবে বাংলাদেশ। চলতি মাসেই দ্বীপরাষ্ট্রের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজটি লিটন বাহিনী জিতেছিল প্রথম ম্যাচ হেরেও। পাল্লেকেলেতে হারের পর ডাম্বুলা ও কলম্বোয় টানা জিতে প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ জেতেন টাইগাররা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে লিটন বাহিনী ঘরের মাঠে মুখোমুখি হয় সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানের। প্রথম ম্যাচে মুস্তাফিজুর রহমানের রেকর্ড বোলিংয়ে রেকর্ডগড়া জয় পায়। বাংলাদেশের টি-২০ ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলিং করেন কাটার মাস্টার। ম্যাচটিতে তার স্পেল ৪-০-৬-২। মুস্তাফিজের মিতব্যয়ী বোলিংয়ের ম্যাচে পাকিস্তানকে ১৯.৩ ওভারে ১১০ রানে অলআউট করেছিল লিটন বাহিনী। যা বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তানের সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড। আগের রেকর্ড ৭ উইকেটে ১২৯ রান। ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমনের ৩৯ বলে ৩ চার ও ৫ ছক্কায় সাজানো ৫৬ রানের ইনিংসে বাংলাদেশ ম্যাচ জেতে ৭ উইকেটে। তখনো ২৭ বল হাতে ছিল। বলের হিসাবে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ব্যবধানের জয়। ২০১৫ সালে মিরপুরে টাইগাররা জিতেছিলেন ৭ উইকেটে। তখন বল বাকি ছিল ২২টি। যা এতদিন পাকিস্তানের সবচেয়ে বেশি বল হাতে রেখে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে এখন ২৪ ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে ৫টি। ৪টিই মিরপুরে। ২০২৩ সালে চীনের হ্যাংঝুতে এশিয়ান গেমসের ব্রোঞ্জ নির্ধারণী ম্যাচে। মিরপুরে টি-২০ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি জেতে ৮ রানের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর। প্রথম ব্যাটিংয়ে ১৩৩ রান করেন টাইগাররা। ২৮ রানে ৪ উইকেটের পতনের পর পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৫৩ রান যোগ করেন জাকের আলি অনিক ও শেখ মেহেদি হাসান। মেহেদি ৩৩ রান করেন। ম্যাচসেরা জাকের খেলেন ৪৬ বলে ৫৫ রানের ইনিংস। এবি ডি ভিলিয়ার্সের মতো ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ব্যাটিং করেন ইনিংসটিতে। একটি চার ছাড়াও ৫টি বড় বড় ছক্কা মারেন। ১৩৪ রানের টার্গেটে পাকিস্তান এক পর্যায়ে ১৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ৩০ রানে ৬টি এবং ৪৭ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে হার যখন প্রায় নিশ্চিত, তখন ফাহিম আশরাফ ৫১ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন। শেষ ওভারের সমীকরণ দাঁড়ায় ১৩ রান ও ১ উইকেটে। জিততে লিটন বাহিনীর চাই ১ উইকেট এবং পাকিস্তানের ১৩ রান। ওভারের প্রথম বলেই বাউন্ডারি মেরে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন ড্যানিয়েল আবদুল্লাহ। পরের বলে মুস্তাফিজ সাজঘরে পাঠান আবদুল্লাহকে। টানটান উত্তেজনার ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতে যায় ৮ রানে।
টানা দুই জয়ে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। কিন্তু ওপেনিং জুটিতে বড় স্কোর নেই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজসেরা লিটন হঠাৎ ছন্দ হারিয়ে ফেলেছেন। দুই ম্যাচে তার স্কোর যথাক্রমে ১ ও ৮। তার পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করছে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশের সুযোগ।