২৪ জুলাই, ২০২৪। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চিরুনি অভিযান অব্যাহত ছিল। গণগ্রেপ্তারে আন্দোলন পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসায় সীমিত সময়ের জন্য শিথিল করা হয় কারফিউ। টানা চার দিন কারফিউয়ের পর কর্মঘণ্টা কমিয়ে ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের অফিস খুলে দেওয়া হয়। খুলে দেওয়া হয় শিল্পকারখানাও। তবে কারফিউ শিথিল থাকলেও সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সার্বক্ষণিক টহলে ছিল।
সারা দিনে নতুন করে আরও প্রায় ১ হাজার ছাত্র-জনতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রাজধানীতে বিএনপি নেতা বরকত উল্লাহ বুলুর ছেলেকেসহ গ্রেপ্তার হয় প্রায় সাড়ে ৬০০ জন। ঢাকার বাইরে গ্রেপ্তার করা হয় প্রায় সাড়ে ৩০০ জনকে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরুসহ ৪৩৭ জনকে পাঠানো হয় কারাগারে।
ইন্টারনেটবিহীন বিচ্ছিন্ন পরিস্থিতিতে কতজন ছাত্র-জনতার মৃত্যু হয়েছে তার সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বারবার দাবি জানানো হচ্ছিল ইন্টারনেট চালুর। ইতিপূর্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নিখোঁজ সমন্বয়কের খোঁজ পাওয়া যায় ২৪ জুলাই। তারা হলেন- সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, আবু বাকের মজুমদার এবং সহসমন্বয়ক রিফাত রশিদ। ১৯ জুলাই থেকে নিখোঁজ ছিলেন তারা। আসিফ মাহমুদ গণমাধ্যমকে জানান, ‘১৯ জুলাই রাত ১১টায় তাকে হাতিরঝিলের মহানগর আবাসিক এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। ২৪ জুলাই বেলা ১১টায় আবার একই জায়গায় চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে দিয়ে যায়।’ একই কথা জানান আবু বাকের মজুমদারও। তিনি জানান, ১৯ জুলাই সন্ধ্যার পর ধানমন্ডির এক গলি থেকে তাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং আন্দোলন বন্ধে স্টেটমেন্ট দিতে বলে। অস্বীকৃতি জানালে তাকে একটা অন্ধকার রুমে আটকে রাখা হয়। যে এলাকা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, তার পাশেই ২৪ জুলাই চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে রেখে যাওয়া হয়। একই দিন রাতে ফেসবুকে স্ট্যাটাসে রিফাত রশিদ জানান, অল্পের জন্য তিনি ‘নিখোঁজ’ হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছেন। তিনি লেখেন, ‘আমি ক্যাম্পাসের দিকে রওনা দিয়েছিলাম এবং সবাইকে ফোনে কানেক্ট করার চেষ্টা করছিলাম এই আশায় যে, সমন্বয়ক প্যানেলের কারও সঙ্গে কানেক্ট করতে পারব। কিন্তু যাত্রাপথে আমার ওপর অ্যাটাক আসে। সাদা পোশাকের লম্বা দুজন মানুষ ধাওয়া দেয়। জিগাতলার দিকে কোনোভাবে একটা অপরিচিত মানুষের বাসায় আশ্রয় নিই। সেই পরিবারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ আজীবন। পরদিন ইনফরমেশন এসেছে আসিফ ভাই, বাকের ভাইকে তুলে নিয়ে গেছে; আমাকেও গুম করার জন্যই ধাওয়া দেওয়া হয়েছিল, সেটা তখন নিশ্চিত হয়েছিলাম। আমাদের সমন্বয়ক প্যানেলের সিদ্ধান্ত ছিল, যদি আমাদের অ্যারেস্ট-গুম করা শুরু করে, তখন সেকেন্ড লেয়ার লিডারশিপ সেফ থাকবে। ফার্স্ট লেয়ার লিডারশিপকে যদি রাজপথ থেকে পুরো সরিয়ে ফেলা হয়, তখন সেকেন্ড লেয়ার লিডারশিপ নেতৃত্ব দেবে। এই সিদ্ধান্ত মেনেই আমি সেফ জোনে গিয়েছিলাম। তারপর এই সাপলুডুর জীবন, আজ এর বাড়ি তো কাল ওর বাড়ি। এর মাঝে যতবার ফোন অন করে কানেক্ট করার চেষ্টা করেছি, ফোন ট্র্যাকের শিকার হয়েছি। বাধ্য হয়ে যে ফ্যামিলিগুলো আমাকে আশ্রয় দিয়েছে, তাদের নিরাপত্তার জন্য ফোনটাকেও অন করতে পারিনি একটিবারের জন্যও। সবাইকে জানাচ্ছি যে, আমি নিরাপদে আছি এই মুহূর্ত পর্যন্ত। কিন্তু জানি না, কতক্ষণ আর নিরাপদে থাকব। আপনারা শহীদ আর নির্যাতিত ভাইদের ভুইলেন না। তাদের রক্ত, ত্যাগকে ভুইলেন না।’