কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই কর্মস্থল ছেড়ে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে প্রবেশ করছেন পুলিশের কিছু সদস্য। নিজেদের পদোন্নতি-পদায়নসহ বিভিন্ন ইস্যুতে এই পুলিশ সদস্যরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নানাভাবে তদবির করছেন। এঁদের তদবিরের কারণে বিভাগীয় মামলাসহ পুলিশসংক্রান্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে জটিলতা তৈরি হয়েছে। পুলিশের এই সদস্যরা নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ের বাইরেও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে তদবির করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
আবার ‘রুলস অব বিজনেস’ অমান্য করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এড়িয়ে পুলিশ অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চিঠিও পাঠানো হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে তদবির ঠেকাতে সাত দফা জরুরি নির্দেশনা জারি করে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত সোমবার (২১ জুলাই) জারি করা ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত কিছু সদস্য অফিস চলার সময়ে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই কর্মস্থল ছেড়ে মন্ত্রণালয়ে সশরীরে হাজির হয়ে বিভিন্ন ধরনের তদবির করছেন, যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। তাঁদের এ ধরনের তদবিরের কারণে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিব্রত হচ্ছেন।
পাশাপাশি দৈনন্দিন সরকারি কাজ ব্যাহত হচ্ছে। তাঁদের এ ধরনের কার্যকলাপ মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিরুৎসাহ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ অধিদপ্তর থেকে কিছু বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণের ক্ষেত্রে শেষ মুহূর্তে চিঠি পাঠানো হয়। আর ওই চিঠির বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আগেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিভিন্ন উপায়ে যোগাযোগ শুরু করেন।
এতে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো কোনো সময় জটিলতা তৈরি হয়। এ ছাড়া পুলিশ অধিদপ্তর থেকে পাঠানো বিভিন্ন চিঠিতে অসম্পূর্ণ প্রস্তাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আবার কিছু ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এড়িয়ে অন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চিঠি পাঠিয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় অবহিত না থাকায় পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণে নানা ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় নিচের সাত দফা নির্দেশনা প্রতিপালন করতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
নির্দেশনাগুলো হলো ক. নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত কর্মস্থল ত্যাগ করা যাবে না। খ. পদোন্নতি ও অন্য কোনো বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে অপ্রয়োজনীয় তদবির থেকে বিরত থাকতে হবে। গ. যথাসময়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রস্তাব পাঠাতে হবে। ঘ. বহিঃ বাংলাদেশ ছুটির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করে পাঠাতে হবে। ঙ. চিকিৎসাজনিত বহিঃ বাংলাদেশ ছুটির জন্য বিশেষজ্ঞ মেডিক্যাল বোর্ডের প্রত্যয়নপত্র ও চিকিৎসা প্রতিবেদন যাচাই করে পাঠাতে হবে। চ. আন্ত মন্ত্রণালয় যোগাযোগের ক্ষেত্রে ‘রুলস অব বিজনেস’ মানতে হবে। ছ. প্রত্যেক কর্মকর্তাকে নিজ নিজ জেমস (ঊেগঝ) আইডিতে প্রবেশ করে হালনাগাদ রাখতে হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা জানান, পুলিশের উন্নয়নসংক্রান্ত ফাইল থেকে শুরু করে বদলি, পদায়ন ও পদোন্নতির ফাইলে কাজ করার ক্ষেত্রে অযাচিত চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে। অনেক সময় তাঁদের অনেকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করছেন। আর শৃঙ্খলাজনিত বা বিভাগীয় মামলার ক্ষেত্রে তো তাঁদের তদবিরে অতিষ্ঠ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অনেক সময় নানা ধরনের প্রভাব খাটিয়ে ফাইল ছাড় করিয়ে নিচ্ছেন। তাঁদের তদবিরের কারণে অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় না। পুলিশ অধিদপ্তর থেকে অনেক সময় বিদ্যমান আইন-কানুন ও নিয়ম-নীতি অমান্য করে চিঠিপত্র বা প্রস্তাব পাঠানো হয়, যা কাঙ্ক্ষিত নয়।
সৌজন্যে : কালের কণ্ঠ
বিডি প্রতিদিন/কেএ