শক্তি, মনোবল, কাজের প্রতি স্পৃহা সবই ছিল, কিন্তু পুঁজি ছিল না। তাদের সাহায্যের হাত বাড়ায় বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন। দেওয়া হয় সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ঋণ। অসহায় ও হতদরিদ্র এসব মানুষ এ ঋণের টাকা নিয়ে স্বল্প পরিসরে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, বাঁশ-বেতের কাজসহ বিভিন্ন পেশার কাজ করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে তারা এখন স্বাবলম্বী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে ছোট-বড় ১২৮টি গ্রামের অসহায় ও হতদরিদ্রদের মাঝে এ চিত্র দেখা যায়। অর্থের অভাবে যখন কাজ করার সুযোগ ছিল না এ লোকগুলো হাত গুটিয়ে বসে থাকত। অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করত। বসুন্ধরার সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ঋণ পেয়ে এখন তারা স্বাবলম্বী। ২০০৫ সাল থেকে বসুন্ধরার এ প্রকল্পের সহায়তা পেয়ে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য জীবনসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ল বাঞ্ছারামপুরের হতদরিদ্র মানুষগুলো। যুদ্ধ যত কঠিন-ই হোক না কেন সাধনা এবং চেষ্টা করলে যুদ্ধে জয়লাভ করা যায়। তারই প্রমাণ মিলেছে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মানিকপুর গ্রামের হেলেনা বেগমের (৩৫) কাছে। স্বামী নুরুল ইসলামের কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। লোক মারফত জানতে পারে বসুন্ধরা সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করে। বসুন্ধরার ঋণদান কর্মীর সন্ধান করেন তিনি। পরে প্রথমবার বসুন্ধরার ঋণের টাকা গ্রহণ করে একটি পুরোনো অটোরিকশা কেনেন। এখন ছোট ছেলে এবং বাবা অটোরিকশা চালায়। আর এতেই মুছে গেছে ভাতের অভাব। দ্বিতীয়বার ঋণের টাকা নিয়ে অটোরিকশা চালানোর পাশাপাশি রিকশার পার্টস ও মেরামত কাজ শুরু করে দেন তিনি। বাপ-বেটার রুজিরোজগার ভালোই হচ্ছে। প্রতিদিন যে পরিমাণ রোজগার হয়, তা থেকে সঞ্চয়ও শুরু করেছেন তারা। নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। তৃতীয়বার ঋণ নিয়ে এবং জমানো টাকা দিয়ে তার বড় ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়ে দেন। হেলেনা বেগমের স্বামী নুরুল ইসলামের মাত্র ২ শতক জমি ছিল। বর্তমানে তিনি ২০ শতক জমির ওপর একটি বসতবাড়ি নির্মাণ করেছেন। ধারিয়ারচর বাজারে ছোট ছেলে, হেলেনা বেগম ও তার স্বামী অটোরিকশা চালানোর সঙ্গে সঙ্গে অটোরিকশার গ্যারেজটি পরিচালনা করছেন। অর্থনৈতিক এবং সামাজিক মর্যাদায় তিনি অনেক ভালো আছেন।
হেলেনা বেগম বলেন, ‘আল্লায় আমারে অনেক দিছে, কী কমু, কী কইতাম। জাগাজমি নাই, খাওয়া-দাওয়া নাই, দিন কাডাই। এক দিন হনলাম বসুন্ধরা টাকা দেয় সুদ ছাড়া আবার ৩ মাস পর থেক্কা তাও আবার অল্প অল্প কইরা নেয়। কতজনের কাছে গেছি জানতাম কেমনে ঋণ আনমো। আনলাম বসুন্ধরার ঋণের টাকা অস্তে অস্তে আল্লায় কইতে কই নিছে কইত্তাম না। বসুন্ধরা যদি ঋণ না দিত আমার এতলা সম্পদ হইতো না। নামাজ পরে আল্লার কাছে কই বসুন্ধরার সকল মালিকরে ভালো রাইখো, বেশি কইরা ভালো রাইখো।’
২০০৫ সাল থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত হেলেনা বেগমের মতো ২৮ হাজার মহিলাকে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছে। এ ঋণের টাকা দিয়ে প্রায় ৩২ স্কিমের মাধ্যমে শত শত পরিবার এভাবে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে।