দায়িত্ব নেওয়ার কয়েকদিনের মাথায় পেরুর নতুন প্রেসিডেন্ট হোসে হেরিও তুমুল বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন। বুধবার রাতভর তার বিরুদ্ধে হওয়া বিক্ষোভ-সহিংসতায় অন্তত একজন নিহত ও কয়েক ডজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির ন্যায়পালের কার্যালয়।
পরে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী আর্নেস্তো আলভারেজ জানান, রাজধানী লিমায় জরুরি অবস্থা জারি হতে যাচ্ছে। বাড়তে থাকা নিরাপত্তাহীনতা দমনে নানান ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলেও এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। জেন জি প্রতিনিধিরা, পরিবহন শ্রমিক ও নাগরিক সংগঠনগুলো বুধবার রাতের এ বিক্ষোভ ডেকেছিল। লাতিন আমেরিকার দেশটিতে গত কিছুদিন ধরেই দুর্নীতি ও ক্রমবর্ধমান অপরাধের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন দেখা যাচ্ছে। বিক্ষোভের জেরে গত ৯ অক্টোবর গভীর রাতে দিনা বোলুয়ার্তেকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরিয়ে হোসে হেরিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বুধবার লিমার কংগ্রেস ভবনের বাইরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাওয়া হাজারো বিক্ষোভকারী পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে, আর বিক্ষোভকারীদের দেখা যায় গোলাবারুদ, পাথর ও দাহ্য পদার্থ ছুড়তে। ‘সবাইকে যেতে হবে’, এই স্লোগান দিয়ে কংগ্রেস ভবনে পৌঁছানোর পর সেখানে থাকা ধাতব ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এই বিক্ষোভের মধ্যে ৩২ বছর বয়সি এদুয়ার্দো মরিসিও রুইজ মারা যান এবং তার মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানান দেশটির ন্যায়পাল কার্যালয়ের প্রতিনিধি ফার্নান্দো লোসাদা। পেরুর প্রসিকিউটর অফিস বলে, রুইজ গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর মারা যান। পরে বৃহস্পতিবার জাতীয় পুলিশের (পিএনপি) প্রধান অস্কার আরিওলা সাংবাদিকদের জানান, বাহিনীর সদস্য লুইস মাগালানেস শারীরিক আক্রমণের শিকার হওয়ার পর ওই গুলি চালিয়েছিলেন। আহত মাগালানেস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাকে দায়িত্ব থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, বলেছেন আরিওলা। এদিকে প্রেসিডেন্ট হেরি ‘এক্স’-এ দেওয়া এক পোস্টে রুইজের মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন এবং নিরপেক্ষ তদন্তের আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে কিছু দুষ্কৃতকারী অনুপ্রবেশ করে সহিংসতা সৃষ্টি করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করা হবে।’ বৃহস্পতিবার বিকালে কংগ্রেসে বিক্ষোভ নিয়ে এক বৈঠক শেষে তিনি জানান, জননিরাপত্তা সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের এখতিয়ার চাইবেন তিনি। হেরি বলেছেন, তার অন্যতম লক্ষ্য থাকবে কারাগারের সংস্কার। তবে এ সম্বন্ধে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি। এর কিছুক্ষণ পর নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভিসেন্তে তিবুরসিও কংগ্রেসকে জানান, সরকার জাতীয় পুলিশে বড় ধরনের সংস্কারের পরিকল্পনা করছে। বিক্ষোভে ৮৯ পুলিশ ও ২২ সাধারণ নাগরিক আহত হয়েছেন এবং ১১ জনকে আটক করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। পুলিশের সংস্কার এবং আইন প্রণয়নে বর্ধিত ক্ষমতা চেয়ে হেরির অনুরোধ নিয়ে রয়টার্স পেরুর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে কিছু প্রশ্নের উত্তর চাইলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। ৩৮ বছর বয়সি হোসে হেরিকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই প্রথম বড় রাজনৈতিক পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। তার মেয়াদ অবশ্য এমনিতেই খুব বেশি দিনের নয়। নির্বাচন নির্ধারিত থাকায় আগামী জুলাই মাসেই তার মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। -রয়টার্স