শনিবার রাত থেকে একটানা বর্ষণ, সেই সঙ্গে ভূমিধস। আর তাতেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। তিস্তা, তোর্সা, জলঢাকা, বালাসন, রায়ডাক, সংকোশসহ উত্তরবঙ্গের প্রতিটি নদীর পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে একাধিক জায়গায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। স্বাভাবিক কারণে দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার জেলায় লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বৃষ্টি, ধসজনিত কারণে উত্তরবঙ্গের পার্বত্য এলাকায় একাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর, সর্বশেষ খবর পর্যন্ত বৃষ্টি, ধসজনিত কারণে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা দার্জিলিং জেলার মিরিকে, সেখানে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের, সুখিয়াপোখরিতে সাত এবং বিজনবাড়িতে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিংগামী জাতীয় সড়কে একাধিক জায়গায় ধস নেমে যানচলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পূজার মৌসুমে বহু পর্যটক পাহাড়ে বেড়াতে বেরিয়েছেন। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে তাদের অনেকেই পাহাড়ের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে আটকে রয়েছেন। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, ফের ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে দার্জিলিং জেলার পুলিশ সুপার প্রবীণ প্রকাশ সেই পর্যটকদের আপাতত হোটেলে থাকারই পরামর্শ দিয়েছেন। সেইসঙ্গে পর্যটকদের দার্জিলিং না আসারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। দার্জিলিং, মিরিক, কার্শিয়াং-এ ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
একই সঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। সামাজিক মাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘রাত থেকে অনবরত বৃষ্টি এবং বাইরে থেকে পানি আসার কারণে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জায়গায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনায় আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। উত্তরবঙ্গে গত ১২ ঘণ্টায় ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তার ওপরে সিকিম এবং পার্শ্ববর্তী ভুটান থেকে নদীর পানি আসার কারণে বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আমাদের কয়েকজন ভাই-বোনের প্রাণ হারানোর ঘটনায় আমি অত্যন্ত মর্মাহত এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। সেইসব পরিবারের কাছে খুব শিগগিরই সহায়তা পাঠানো হবে।’
এদিকে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর থেকে আগামী দুই-তিন দিন উত্তরবঙ্গে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে। ফলে একদিকে যেমন জনজীবন বিপর্যস্ত হতে পারে, তেমনি উদ্ধারকাজ ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।