মিরপুর স্টেডিয়ামে ঢুকেই বোঝা গেল, নির্বাচনি হাওয়ায় ভাসছে বিসিবি। মূল গেটে দাঁড়াতে দেখা যায়, পরিচালক পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী প্রার্থীদের বিভিন্ন ব্যানার। ব্যানার দেখে নির্বাচনের উত্তাপ বোঝা গেছে বিসিবিতে। সত্যিকার অর্থে উত্তাপ নেই। নির্বাচনি প্রার্থীদের চলাফেরা নেই। স্টেডিয়ামের ভিতরে শুধু মিডিয়ার আনাগোনা। সবাই ব্যস্ত বিসিবির আজকের নির্বাচন নিয়ে। সোনারগাঁও হোটেলে আজ ক্যাটাগরি-১, ২ ও ৩-এর ২৩ পরিচালকের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অবশ্য ক্যাটাগরি-১ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন ১০ জনের ছয়জন। গতকাল ঢাকা বিভাগের কোটায় দুই পরিচালকের নির্বাচন থেকে নিজের প্রার্থিতা সরিয়ে নেন জামালপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার আবদুল্লাহ আল ফুয়াদ। মিরপুর স্টেডিয়ামে মিডিয়ার মুখোমুখিতে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যাখ্যায় অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের রাতের ভোটকেও হার মানিয়েছে, ‘রাতের ভোট তো তবু তো ওরা ব্যালট বাক্স ভরেছে, সেটা আলাদা জিনিস। এরা তো সুকৌশলে এমন কাজ করছে, সেটা (রাতের) ব্যালট বাক্সকেও হার মানিয়ে ফেলছে।’ রেদোয়ানের সরে দাঁড়ানোয় ক্যাটাগরি-১ থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও নাজমুল আবেদীন ফাহিম। বিসিবির আজকের নির্বাচনে ভোটাররা প্রথমে নির্বাচিত করবেন পরিচালক। এরপর ২৫ পরিচালক নির্বাচিত করবেন বিসিবি সভাপতি। ২৩ পরিচালক নির্বাচিত হবেন ভোটারদের সরাসরি ভোটে। দুই পরিচালক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কোটায়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ১৯২ জন ভোটারের ভোট দেওয়ার কথা। দুদকের অভিযোগ থাকায় ১৫ ক্লাবের ভোটাধিকার বাতিল করা হয়েছিল। পরবর্তীতে রিট করায় হাই কোর্ট ১৫ ক্লাবের ভোট দেওয়ার অধিকার ফিরিয়ে দেন। ক্যাটাগরি-২-এ এখন ৭৬ ভোটার নির্বাচিত করবেন ১২ পরিচালক। ৩০ জন প্রার্থী হয়েছিলেন। প্রত্যাহারের পর অফিশিয়ালি টিকে আছেন ১৬ প্রার্থী। সেখান থেকে আবার সরে দাঁড়ান লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ও কাঁঠালবাগান গ্রিন ক্রিসেন্ট ক্লাবের মেজর (অব) ইমরোজ আহমেদ। শোনা যাচ্ছে, ইয়াং পেগাসাস এ-১ ক্লাবের আহসানুর রহমান মল্লিক রনি ও এইচ ওয়ারিয়রসের মো. রাকীব উদ্দিন সরে দাঁড়াতে পারেন। যদি সরে দাঁড়ান তাহলে ক্যাটাগরি-২-এর ১২ ক্লাব পরিচালকও নির্বাচিত হবেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।
রেদোয়ান সরে দাঁড়ানোয় আমিনুল ইসলাম ও নাজমুল আবেদীন আনঅফিশিয়ালি নির্বাচিত হয়েছেন। নাম প্রত্যাহারের বিষয়ে রেদোয়ান বলেন, ‘জেলা ও বিভাগীয় ক্রিকেটে আমিনুল ও ফাহিমের অবদান কতটুকু? তারা গত এক বছরে অ্যাডহক কমিটিতে ছিলেন না কেন?’ রেদোয়ানের প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি আমিনুল। তামিম ইকবালসহ ঢাকার অনেক ক্লাব সরে দাঁড়ানোয় উত্তাপ কমে গেছে নির্বাচনের। নির্বাচন থেকে অনেকের সরে দাঁড়ানোকে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত বলেন আমিনুল বুলবুল, ‘যে যে নির্বাচন বয়কট করেছেন, এসব তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন করতে যাচ্ছি। এর বাইরে কোনো কথা বলব না।’ ক্রিকেটপাড়ায় গুঞ্জন, আমিনুল বুলবুলকে পুনরায় বিসিবির সভাপতি করতে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা সহায়তা করছেন। এমন অভিযোগ উড়িয়ে দেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল, ‘আমার ঠিক মনে নেই, কবে আমি বলেছি ক্রীড়া উপদেষ্টা আমাকে অনুরোধ করেছেন বা ক্রীড়া উপদেষ্টা সহযোগিতা করেছেন। যে সময়সীমার মধ্যে আমি কাজ করছিলাম আর কী! এখানে তাকে আমি ধন্যবাদ দিতে চাই আরেকটা কারণে। তিনি একজন মন্ত্রী পদমর্যাদার মানুষ। আমি জানি তিনি রাজশাহীতে গেছেন। শুধু সুষ্ঠু নির্বাচন না, চেষ্টা করেছেন যেন ভালো বোর্ড তৈরি করতে পারি। এখানে আমার কাছে প্রভাবের কিছুই মনে হয়নি।’ মিডিয়ার মুখোমুখিতে তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে যে, বাংলাদেশের ক্রিকেটের স্বার্থে আমাকে চালিয়ে যেতে হবে। যারা আমাকে ভোট দিচ্ছেন বা দেবেন না, কিংবা আপনারা যারা আছেন, যদি মনে করেন যে আমি যথেষ্ট যোগ্য নই, তবে আমি যে কোনো সময় সরে যেতে প্রস্তুত।’ বিসিবি নির্বাচনে ইতোমধ্যেই ই-ভোট ও পোস্টাল ভোট দিয়েছেন অনেকে। বেশ কয়েকজন পরিচালক নির্বাচিত হয়ে যাওয়ার পর উত্তাপ শুধু ক্যাটাগরি-৩ ঘিরে। এ ক্যাটাগরিতে পরিচালক নির্বাচিত হবেন মাত্র একজন। পরিচালক হতে নির্বাচন করছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট ও সাবেক ক্রিকেটার দেবব্রত পাল। ভোট দেবেন ৪৫ ভোটার। ক্যাটাগরি-১-এ নির্বাচন হবে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে। রাজশাহীর একজন পরিচালক পদে নির্বাচন করছেন মুহাম্মদ রহমান ও এস এম শামস মবিন। প্রত্যাহার করেছেন হাসিবুল আলম। রংপুর বিভাগের একজন পরিচালক হতে নির্বাচন করবেন হাসানুজ্জামান, রেহাতুল ইসলাম খোকা ও মো. নুর-এ-শাহাদাৎ স্বজন।