জাপানের রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর দেশটির রাজনীতিতে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হলো। জাপানের শাসক দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) নেতৃত্বে এলেন সানায়ে তাকাইচি। এর মধ্য দিয়ে ৬৪ বছর বয়সী এই পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দোরগোড়ায়।
যুক্তরাজ্যের ‘আয়রন লেডি’ খ্যাত প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার সানায়ে তাকাইচির রাজনৈতিক জীবনের আদর্শ।
তিনিও ‘আয়রন লেডি’ হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন। দীর্ঘ লড়াই শেষে এবার তার সেই স্বপ্ন পূরণের দোরগোড়ায় পৌঁছেছেন।
১৯৬১ সালে নারা প্রিফেকচারে জন্ম নেওয়া সানায়ের পরিবারের কেউ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। বাবা অফিস কর্মী এবং মা পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন।
তার রাজনৈতিক আগ্রহ জন্ম নেয় মার্কিন-জাপান বাণিজ্য সংঘাতের সময়, যখন তিনি মার্কিন কংগ্রেসওম্যান প্যাট্রিসিয়া স্ক্রোডারের অফিসে কাজ করে জাপানের প্রতি পশ্চিমাদের ভুল ধারণা এবং দেশটির স্বাধীনতার গুরুত্ব সম্পর্কে উপলব্ধি লাভ করেন।
তাকাইচি একসময় একটি হেভি মেটাল ব্যান্ডের ড্রামার ছিলেন এবং টিভি হোস্ট হিসেবেও কাজ করেছেন। তার বিভিন্ন রোমাঞ্চকর শখের মধ্যে ছিল স্কুবা ডাইভিং এবং গাড়ি চালানো। তার প্রিয় টয়োটা সুপ্রা গাড়িটি এখন নারা মিউজিয়ামে সংরক্ষিত।
১৯৯২ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার পার্লামেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান সানায়ে। কিন্তু পরের বছর ভোটে জিতে ১৯৯৬ সালে এলডিপিতে যোগ দেন। তারপর থেকে তিনি দশবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন এবং মাত্র একবার হেরেছেন। এ ছাড়া, বিভিন্ন উচ্চপদে কাজ করেছেন তিনি, যেমন—অর্থনৈতিক নিরাপত্তা মন্ত্রী, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী এবং অভ্যন্তরীণ বিষয় ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবেও তিনি রেকর্ড সময় সেবা দিয়েছেন।
২০২১ ও ২০২৪ সালে এলডিপির নেতৃত্ব বাছাইয়ের নির্বাচনে দুইবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে গেলেও এবার তার তৃতীয় প্রচেষ্টা সফল হয়েছে।
এলডিপির ৭০তম বার্ষিকীতে নেতা নির্বাচিত হয়ে এখন তিনি জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অভিষেকের অপেক্ষায় রয়েছেন।
তাকাইচি রক্ষণশীল মতাদর্শের অধিকারী। তিনি বিবাহিত নারীদের পূর্বনাম রাখার বিরোধী এবং সমলিঙ্গ বিবাহের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তিনি নারীদের জন্য উন্নত স্বাস্থ্যসেবা, শিশুসংক্রান্ত খরচে করছাড় এবং কর্মক্ষেত্রে বাচ্চাদের যত্নসহায়তা প্রদানের জন্য কর সুবিধার মতো প্রস্তাব এনেছেন। নিজের পরিবারের যত্ন নেওয়ার অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি এই নীতি গ্রহণ করেছেন। তিনবার পরিবারে 'নার্সিং ও কেয়ারগিভিং' দায়িত্ব পালনের কারণে তিনি চান, মানুষকে যেন তাদের পেশা ছেড়ে যেতে না হয়।
প্রয়াত শিনজো আবের ‘আবেনোমিকস’ অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সানায়ে। এ ছাড়া, দেশীয় আত্মরক্ষার সক্ষমতা বাড়াতে সাংবিধানিক পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দিয়েছেন তিনি।
এলডিপি আজ শক্তিশালী রাজনীতির কেন্দ্রে থাকা সত্ত্বেও ভোটারদের আস্থা হারাচ্ছে। দলটির ডানপন্থী অংশ থেকে সরে গিয়ে অনেক ভোটার এখন আরো কট্টর ডানপন্থী ‘সানসেইতো’ পার্টির দিকে ঝুঁকছেন। এই সংকট মোকাবেলায় তাকাইচি সানায়ে দলের ঐতিহ্য ও জাতীয় স্বার্থকে সামনে রেখে পরিবর্তনের অঙ্গীকার করেছেন।
আগামী ১৫ অক্টোবর সংসদ তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। জাপানের প্রথম নারী ‘আয়রন লেডি’ হিসেবে সানায়ে তাকাইচি দেশকে নতুন পথ দেখাতে প্রস্তুত।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল